অবশেষে ঢাকাকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উন্নত বিশ্বের মতো পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ড করা হবে রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা। শুধু বিদ্যুৎ লাইনই নয়, এর সঙ্গে ইন্টারনেট, ডিশলাইনসহ সব ধরনের সংযোগ লাইন ভূগর্ভস্থ করা হবে। তবে এজন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে নগরবাসীকে।
প্রথম ধাপে আগামী ২০২৫ সালের মাঝামাঝি নাগাদ তারের জঞ্জাল মুক্ত হবে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরকেই ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের আওতায় আনা হবে।
তারের জঞ্জাল মুক্ত করে পরিচ্ছন্ন ও উন্নত ঢাকা গড়ার কাজ প্রথম শুরু করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। গত ২৩ নভেম্বর ‘ধানমণ্ডি আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে সংস্থাটি।
আগামী ২৫ বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ধানমণ্ডি এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ করার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে আগামী ২৫ বছর এই এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্য রাস্তা খননের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টিতে ব্রেকডাউন বা তার ছিড়ে পড়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিকল হওয়া বা মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, এটা আমাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। ধানমণ্ডি আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে এর কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। শুধু বিদ্যুতের লাইনই নয়, এর মাধ্যমে ইন্টারনেট, ডিশলাইনসহ অন্যান্য যেসব লাইন আছে সবকিছুই এর মধ্যে থাকবে। এর মাধ্যমে যেমন শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সিস্টেম লসও অনেক কমে আসবে।
বিকাশ দেওয়ান আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালের শেষের দিকে ধানমন্ডি আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু মাঝখানে আমরা এক বছর কাজ শুরু করতে পারিনি। আবার দিনের বেলায় কোনো কাজ করা যায় না। সব কাজ রাতে করতে হচ্ছে। তাই আরো কিছু সময় লাগবে। আশা করছি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরকেই আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ধানমন্ডি এলাকার ২০ কিলোমিটার বিদ্যমান বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনকে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল নেটওয়ার্কে রূপান্তর করা হবে। এছাড়া হাতিরঝিল এলাকার বিদ্যুৎ লাইন ও খুঁটি অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন করা হবে, যা ওই এলাকার নান্দনিক সৌন্দর্য বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে।
ডিপিডিসি সূত্র জানিয়েছে, ধানমন্ডি এলাকায় চারটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র হতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে আধুনিক রিং মেইন ইউনিটের (আরএমইউ) মাধ্যমে এবং এই আরএমইউগুলোকে নিজেদের মধ্যে আন্তসংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে কোনো স্থানের আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন কাটা পড়লে বা কোনো আরএমইউ বিকল হলে ওই আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন বা আরএমইউ বাদে বাকি অংশ বিকল্প ব্যবস্থায় চালু থাকবে। ফলে এখনকার মতো কোথায়ও সমস্যা হলে পুরো বা বড় একটি এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে না। অপরদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড বিতরণ ব্যবস্থার যন্ত্রাংশে অত্যাধুনিক অটোমেশন ও কমিউনিকেশন সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত আছে, যা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ত্রুটি শনাক্ত করা ও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনর্বহাল করা সম্ভব হবে।
এছাড়া ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্পটির আওতায় নতুন ১৪টি ১৩২/৩৩ কেভি ও ২৬টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং বিদ্যমান ৮টি ১৩২/৩৩ কেভি ও ৪টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
ঢাকা শহরে জমির দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনায় আধুনিক ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ৩৫/৫০ এমভিএ ৩৩/১১ কেভি পাওয়ার ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হচ্ছে। এই ধরনের পাওয়ার ট্রান্সফর্মার বাংলাদেশে এই প্রথম স্থাপন করা হচ্ছে।
আর টঙ্গীতে একটি অত্যাধুনিক ম্যাকানাইজড ওয়্যার হাউজ নির্মাণ করা হচ্ছে যার সঙ্গে ওপেন হ্যাঙ্গার সংযুক্ত থাকবে। বাংলাদেশে এ ধরনের ওয়্যার হাউজ এটিই প্রথম।
গত ১ ডিসেম্বর একটি প্রকল্পের সাইট পরিদর্শন শেষে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, বিতরণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে। ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার ও সাবস্টেশন এবং অটোমেশন, সেন্ট্রাল স্ক্যাডা (পাওয়ার প্লান্টগুলো এক নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে কাজ করে স্ক্যাডা) বিতরণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। অপটিক্যাল ফাইবারসহ ভূগর্ভস্থ ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডুয়েল সোর্সের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
আপনার মতামত লিখুন :