স্টাফ রিপোর্টার: বাঘারপাড়ার খাজুরা বাজারে দোকানঘর দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে পাল্টা মামলা করা হয়েছে। উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের পার্বতীপুরের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিরা হলেন, বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের তেলীধান্যপুড়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে মজনুর রহমান (৪৫), মতিন বিশ্বাস (৬৫) ও ফজলুর রহমান (৫৫) এবং সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মতিন বিশ্বাসের ছেলে রাজীব (৩৫) ও সজীব (৩০)।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শাহাবুদ্দিনের খাজুরা বাজারে তিথি খেলাঘর নামে একটি দোকানঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন আগে তার পিতা অলিয়ার লস্কার ডিসিআর-এর মাধ্যমে ওই জায়গা বন্দবস্ত নিয়েছেন। আসামিরা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হওয়ায় ওই দোকানের ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা লোকজন শাহাবুদ্দিনের দোকানে এসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারপিট করে ও খুনের হুমকি দেয়। এ পর্যায়ে আসামিরা দোকানে থাকা বিভিন্ন গহনা, খেলনা সরঞ্জামসহ ২০ লাখ টাকার কসমেটিক্স দ্রব্যাদি লুট করে যায়। প্রাণ ভয়ে বাদী স্ত্রী-সন্তান দিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলে দোকানঘরটি বেদখলে চলে যায়। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনার পর মামলা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় গত ৪ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
শাহাবুদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের দোকানঘর দখলকে কেন্দ্র করে বন্দবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ ডাকু ও যুবলীগ নেতা লিন্টু রায় আমাকে হয়রানি করতে নাশকতা মামলায় জড়ায়। এ সময় প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। পরে সালিস বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী ডাকুর হাতে আমি প্রায় ১০ লাখ টাকা দিই। কিন্তু আজও আমাদের দোকানঘরের দখল বুঝে পায়নি।’
অভিযুক্ত মজনুর রহমান জানান, ২০২০ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকায় পার্বতীপুরের ওলিয়ার লস্কারের কাছ থেকে দোকানঘরটি ক্রয় করি। কিন্তু তৎকালীন ভাড়াটিয়া তিথি খেলাঘরের তাপস কুমারের সাথে চুক্তি চলমান ছিল। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় দোকান ছাড়ছিলেন না তিনি। এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে সালিস বৈঠকে মজনুর সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সময় ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি চেক মধ্যস্থতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা ডাকুর হাতে দেন অলিয়ার লস্কারের ছেলে শাহাবুদ্দিন। এর পরপরই ভাড়াটিয়া তাপস ওই দোকানঘর ছেড়ে দিলে মজনু সেখানে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সালিস বৈঠকে দেওয়া ওই চেক তো দূরের কথা; আজও একটি টাকা পাননি মজনু।
খাজুরা বাজারের ছিট কাপড় ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৫ আগস্ট দিনে-দুপুরে শাহাবুদ্দিন (সাবেক এমপি রণজিত রায়ের ছেলে রাজীবের লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য), চিহিৃত সন্ত্রাসী রায়পুর ইউনিয়নের নলডাঙ্গার ইছা, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী পার্বতীপুরের আলাউদ্দিন ও সংঘবদ্ধ দল নিয়ে দোকানঘর দখল করতে আসেন। এ সময় তারা ওই দোকানের বর্তমান মালিক মজনুর কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মজনু আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিনও পাল্টা একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। এতে মজনুর সাথে তার মামলার সাক্ষী ব্যবসায়ীদেরকেও আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে সালিশের মধ্যস্থতাকারী বন্দবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ ডাকুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দিন থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :