টেলিগ্রাম রিপোর্ট : ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা। জীবন চলার পথে আমরা যেকোনও সমস্যার সম্মুখীনই হই না কেন, ইসলাম তার সুষম সমাধান দিয়েছে। একসময় ইসলাম শুধু আরব উপদ্বীপে আবদ্ধ ছিল কিন্তু কাল পরিক্রমায় আজ সাড়ে ১৪ শ বছর পর আরব থেকে বহুদূরে, আমাদের ভারতবর্ষেও অসংখ্য মুসলমানের বসবাস।
স্বাভাবিকভাবেই মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য ইত্যাদির প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ধর্ম পরিপালনের ক্ষেত্রেও একজন মুসলমানের বিশেষ কিছু জিনিসের প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে স্বাধীন ইবাদতস্থল উল্লেখযোগ্য।
আমাদের দেশে প্রচুর মসজিদ, তবে বাস্তবতা হলো- মুসলিমদের সংখ্যা বিবেচনায় তা অপ্রতুল। যদি ইসলামি বিধান মেনে সব মুসলমান প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতো, তাহলে মসজিদের অপ্রতুলতার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারতাম। কিন্তু সত্যি হলোÍআমরা এখনও বাস্তবিক মুসলিম হতে পারিনি।
ইসলামে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলেও শুক্রবারে জুমার নামাজ মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জুমা জামাতে ছাড়া একাকী আদায় সহি হয় না। জোহরের নামাজের বদলে এদিন মুসলমানরা মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। আর জুমার দিনই মসজিদের অপ্রতুলতার বিষয়টি টের পাওয়া যায়। কারণ আমাদের দেশের শহরগুলোতে যে মসজিদ আছে, সেগুলোতে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হয় না। এতে তারা বাধ্য হয়ে মানুষের চলাচলের রাস্তা অথবা মসজিদের আশপাশে খোলা জায়গায় নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ চলাচলের রাস্তা কিংবা মানুষের কষ্টের কারণ হয়– এরকম স্থানে রাসুল (সা.) নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) সাত জায়গায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেনÍময়লা রাখার স্থানে, কসাইখানায়, কবরস্থানে, চলাচলের রাস্তায়, গোসলখানায়, পশুশালায় এবং বাইতুল্লাহর (কাবা ঘরের) ছাদে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬)
এখন প্রশ্ন হলো- তাহলে যে, প্রতি শুক্রবার অসংখ্য মুসল্লি চলাচলের রাস্তায় জুমা আদায় করেন, তাদের নামাজ কী সহি হবে?
এ প্রসঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইসলামি বিদ্যাপীঠ নদওয়াতুল উলামার দারুল ইফতা থেকে বলা হয়েছে, হ্যাঁ, তাদের নামাজ সহি হবে। তবে এর আগে মুসল্লিকে জুমার নামাজ পড়তে এমন মসজিদে যেতে হবে, যে মসজিদ যথেষ্ট প্রশস্ত। যদি প্রথম মসজিদে জায়গার সংকুলান না হয়, তাহলে অন্য মসজিদে যাবে। সেখানেও যদি জায়গা না পায়, তাহলে চলাচলের রাস্তায় শুধু জুমার ফরজ দুই রাকাত পড়বে। বাকি সুন্নাত ও দোয়া দরুদ পড়তে হবে ভিন্ন কোনও জায়গায়।
জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় নামাজ আদায় সহি হওয়ার ব্যাপারে একটি হাদিসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রাস্তার মাঝে বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাতে না বসে তো আমাদের উপায় নেই। আমরা সেখানে (বসে) আলোচনা করে থাকি। রাসুল (সা.) বলেন, যদি তোমাদের একান্তই বসতে হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, রাস্তার হক কী? তিনি বলেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২২৯)
এ বিষয়ে করাচির আল ইখলাস দারুল ইফতারের ফতোয়া হলোÍএরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মুসল্লিরা অন্য মসজিদে যাবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে জুমার নামাজ ত্যাগ করা যাবে না; বরং রাস্তার কিছু অংশে নামাজে দাঁড়াবে এবং কিছু অংশ যাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য খোলা রাখবে। এটাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে রাস্তায় শুধু জুমার দুই রাকাত ফরজ আদায় করতে হবে। বাকি সুন্নত-নফল আদায় করতে হবে সেখান থেকে সরে অন্য জায়গায়। (আল ইখলাস ওয়েবসাইটের ৩৪৫১ নম্বর ফতোয়া)
রাস্তায় নামাজ আদায় সম্পর্কে সৌদি আরবের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ সালেহ আলমুনাজ্জিদ বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানুষ চলাচলের রাস্তায় নামাজ আদায় জায়েজ নেই, তবে যদি মসজিদে স্থান সংকুলান না হয়, তখন মসজিদ সংলগ্ন পথের ওপর প্রয়োজনের স্বার্থে নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। (আল ইসলাম সুআল জাওয়াব ওয়েব)।
লেখক: শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা
আপনার মতামত লিখুন :