টেলিগ্রাম রিপোর্ট : ঋণ আদায় করতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে পড়েছে জনতা ব্যাংক যশোর চাঁচড়া শাখার কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার বাগেরহাট বাজারে ঋণ আদায় করতে যান ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এসময় ঋণ জালিয়াতির শিকার কৃষকদের তোপের মুখে পড়েন তারা। জনরোষের ভয়ে ওই এলাকা থেকে চোরের মত পালিয়ে আসেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান।
এদিকে, ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় জনতা ব্যাংক খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন। তারা আজ তদন্তে আসবেন। কৃষকদের সাথে কথা বলবেন। দোষিদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বিশেষ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরই আওতায় ব্যাংক ঋণ আদায় শুরু করেছে। এই ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক চাঁচড়া শাখা থেকে ঋণ গ্রহিতা অন্তত: দুই শতাধিক কৃষকের নামে চিঠি দেওয়া হয়। এরমধ্যে অন্তত: শতাধিক কৃষক তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জালিয়াতির কারণে ওই সব কৃষককে খেলাপিসহ মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে যান। ঋণ পরিশোধ করার পরও চিঠি দেওয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে কৃষকরা।
কৃষক আব্দুর রউফ জানান, তিনি ২০/২৫ বছর আগে ব্যাংক থেকে ১৬ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দেশের বাইরে চলে যান। বিদেশ থেকে তিনি এক আত্মীয়র মাধ্যমে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এ বছর তাকে ৫১ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি দেখিয়ে পত্র দেয় ব্যাংক। পরবর্তীতে ওই আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ করেন আব্দুর রউফ। ওই আত্মীয় তাকে ব্যঅংকের সাড়ে ১৪ হাজার টাকার ভাউচার দেন। এই ভাউচার নিয়ে ব্যাংকের আসলে কর্মকর্তা রইচ সেই টাকা পরিশোধ করার আশ^াস দেন। একই ভাবে করিচিয়া গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন ২০১১ সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে তাকে জানানো হয় তিনি ৮০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি। ওই বছর ইব্রাহিম ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং সব ঋণ মওকুপ করার জন্য শাখা ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বাকী ১০ হাজার টাকা পরিশোধ না দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা ঋণী দেখায়। এরপর গত বছর (২০২১) সালে তাকে আবারও ১৭ হাজার ৩৯৪ টাকা ৬৫ পয়সা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। ৬ ডিসেম্বর ইব্রাহিম ওই টাকা পরিশোধ করে বর্তমান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নেন। গত ২০ নভেম্বর ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, ২০১১ সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ঋণটি খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আপনার নিকট ২৮ হাজার ৮৯০ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ঋণটি পরিশোধ করার জন্য মৌখিত ও লিখিতভাবে জানানো হলেও পরিশোধ করার কোন উদ্যোগ নেননি। গতকাল (২৯ নভেম্বর) বাগেরহাট বাজারে ঋণ আদায় ক্যাম্পে এসে পাওনা ২৮ হাজার ৮৯০ টাকা পরিশোধের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ঋণ আদায়ের সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ঋণের টাকা আদায় করা হবে।
শুধু আব্দুর রউফ কিম্বা ইব্রাহিম হোসেনই নয়, রুদ্রপুর করিচিয়াসহ আশপাশের গ্রামের অন্তত: শতাধিক কৃষককে ঋণ খেলাপিতে পরিণত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ব্যাংক কতৃপক্ষ ঋণ আদায় করতে যান। এসময় স্থানীয় জনতার তোপের মুখে পড়েন তারা। ব্যাংকের চাঁচড়া শাখার ব্যবস্থাপক ঋণ জালিয়াতির শিকার কৃষকদের জানান, আপনাদের ঋণ আপডেট করার জন্য এখানে আসা হয়েছে। যাদের ঋণ নিয়ে সমস্যা তাদেরকে শাখায় গিয়ে সমাধান করতে হবে।
ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাংকের উপ ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, আমি সকালে জানতে পেরেছি, বাগেরহাট বাজারে কৃষকরা ঋণ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আমি এ ঘটনা জানার পর খুলনা জিএমকে জানিয়েছি। সেখান থেকে আগামীকাল (আজ) ৩ সদস্যর একটি কমিটি আসবে। তারা তদন্ত করবে। তদন্তে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :