ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে: ড. নিয়ামুল


টেলিগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৪, ২০২২, ৮:৪৭ অপরাহ্ণ / ২৭২২০ ০
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে: ড. নিয়ামুল

টেলিগ্রাম রিপোর্ট :  ২২ মে ছিল আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। ‘উই আর পার্ট অব সলিউশন ফর নেচার’ বা ‘আমরা প্রকৃতির সমাধানের অংশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৩ সালের শেষ দিকে দিবসটি পালনের জন্য ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশে এই দিবস পালন বন্ধ করে দিলে ২০০২ সালের ২২ মে পালনের জন্য দিবসটি পুনঃনির্ধারণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। মূলত ১৯৯২ সালের ২২ মে কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশনে দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে ‌‘জীববৈচিত্র্য’ নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. নিয়ামুল নাসেরের সঙ্গে।

* জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
** জীববৈচিত্র্য হলো উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবসহ পৃথিবীর গোটা জীবসম্ভার, তাদের অন্তর্গত জীন ও সেগুলির সমন্বয়ে গঠিত বাস্তুতন্ত্র। এখানে একে অন্যের পরিপূরক। সৃষ্টির শুরু থেকে প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে একে অপরের এই নির্ভরশীলতা চক্রাকারে চলছে। একই বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করছে। তাই প্রজাতির বৈচিত্র্য যতো বাড়বে বা প্রজাতির সংখ্যা যতো বাড়বে, সেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তথা স্থিতিশীলতা ততো বাড়বে। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় তথা সুস্থতার সঙ্গে জীবন ধারণের জন্যই প্রয়োজন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের। মানুষসহ সমগ্র প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য একান্ত অপরিহার্য।

* ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব কী?
** বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেঁচে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্য প্রয়োজন। শুধু কয়েকটি আলোচিত প্রজাতি রক্ষা করলেই জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয় না। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন সব প্রকারের জীব প্রজাতির ব্যাপারে সমান গুরুত্ব দেওয়া। পরিবেশ বিজ্ঞানের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীববৈচিত্র্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানব সমাজের উপকারে আসে। বিশ্বকে সব রাষ্ট্রের মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রতিপালন আবশ্যক। দেশের কৃষি অগ্রযাত্রাকে সুষ্ঠুভাবে ত্বরান্বিত করতে জীববৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে জীবমণ্ডলের সার্বিক সংরক্ষণ ও কার্যকারিতা বজায় রাখার কারণে জীববৈচিত্র্য আবশ্যক। পরিবেশে অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখতে, বৃষ্টিপাত ঘটাতে উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিহার্য।

* জীববৈচিত্র্য কি কমে যাচ্ছে? কেন?

** হ্যাঁ। দিনের পর দিন প্রাকৃতিক ভারসাম্য কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীববৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাদ্য শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায় জীববৈচিত্রের উপস্থিতি কমে যায়। মানুষের অবৈধ উপায়ে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী নিধন, নদ-নদী ও জলাশয় ভরাট জীববৈচিত্র্যকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেরও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। আমাদের দেশের সুন্দরবন উপকূলের বিশাল এলাকায় জীববৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ দিকগুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

* বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য কি হুমকির মুখে?
** সবসময়ই বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে ছিলো এবং আছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেরও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। আমাদের দেশের সুন্দরবন উপকূলের বিশাল এলাকায় জীববৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ দিকগুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

* আমরা জানি, বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্তির পথে। এটি কেন হচ্ছে?
** জনসংখ্যার চাপে অনেক গাছপালা ও লতাগুল্ম এবং প্রাণিবৈচিত্র্য আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। কিছু কিছু আবার বিলুপ্ত হয়েও গেছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের অবৈধ উপায়ে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী নিধন, নদ-নদী ও জলাশয় ভরাট জীববৈচিত্র্যকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারজনিত দূষণ ও দৈনন্দিন রাসায়নিক ব্যবহারজনিত কারণে আজ নানা প্রাণী বিলুপ্তির পথে। সংরক্ষণের অভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীকে আমরা হারাচ্ছি।

* জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপায়গুলো কী কী?
** গাছ না কাটা এবং প্রচুর গাছ লাগানো। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। নদীর পানি দূষিত করা যাবে না। পাখি শিকার না করা। রাস্তা-ঘাটের কুকুর-বিড়াল না মারা। শখের বসে পাখি খাঁচায় আটকে না রাখা। প্লাস্টিক ব্যবহার কম করা ও তা পরিবেশে না ফেলা। এক কথায়, যেহেতু আমরা সবাই পরিবেশের অংশ, নিজেকে, নিজের পরিবারের ওপর যেমন পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ভালোবাসি, ঠিক তেমনি প্রকৃতির প্রত্যেকটি জিনিসকে নিজের মনে করে ভালোবাসুন। এমনিতেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকতে পারে।

* জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর আবাসস্থল হচ্ছে সংকুচিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
** জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর আবাসস্থল দিনের পর দিন সংকুচিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। জলাশয় ধ্বংস না করা, প্রকৃতি থেকে কোনো কিছু অতি আহরণ বন্ধ করা, পরক বা আগ্রাসী প্রজাতি লালন-পালনে উৎসাহী না হওয়ার বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

* বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার কী কী উদ্যোগ নিতে পারে?
** বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে শিশুদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাঠ্যপুস্তকেও এ  জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও শিশুদের সচেতন করে তোলা যায়।

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031