টেলিগ্রাম রিপোর্ট : ম্যাচের আগে আর্জেন্টাইন ভক্ত-সমর্থকরা হিসাব কষছিলেন সৌদি আরবকে কয়টি গোল দেবেন মেসি-ডি মারিয়ারা। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অঘটনের জন্ম দিলো সৌদি আরব। র্যাঙ্কিংয়ে ৫১ নম্বরে থাকা দলটি ২-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ৩ নম্বরে থাকা আর্জেন্টিনাকে। যারা কিনা টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে খেলতে নেমেছিল এই ম্যাচে। ফিফা বিশ্বকাপে এমন অঘটন রয়েছে বেশ কয়েকটি।
যুক্তরাষ্ট্র ১-০ ইংল্যান্ড (১৯৫০)
আলফ রামসে, টম ফিনি, বিলি রাইট তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ইউরোপিয়ান ফুটবল। তাদের নিয়ে ১৯৫০ বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটই ছিল ইংল্যান্ড। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র আসরে অংশ নেয় সাদামাটা দল নিয়ে। যাদের কেউ ছিলেন ডিশওয়াশার, কেউ ডাকপিয়ন কেউবার শিক্ষক। অনেকটা সখের বশে ব্রাজিলে খেলতে গিয়েছিলেন তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৩৮তম মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে দেন জো গায়েটজেনস। তার গোলটাই বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দেয়।
পশ্চিম জার্মানি ৩-২ হাঙ্গেরি (১৯৫৪)
গ্রুপ পর্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল হাঙ্গেরি। ফেরেঙ্ক পুসকাস-ককসিসদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবে এমন কোনো টিম ছিল না। প্রতাপ নিয়েই ফাইনালে পা রেখে হাঙ্গেরি। প্রতিপক্ষ যথারীতি জার্মানি। শুরুতেই ২-০তে পিছিয়ে পড়ে জার্মানরা। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে জিতে নেয় বিশ্বকাপ।
উত্তর কোরিয়া ১-০ ইতালি (১৯৬৬)
দক্ষিণ কোরিয়া ইস্যুতে স্নায়ু যুদ্ধে পশ্চিমা জোটের বিরোধিতা করায় সেবার উত্তর কোরিয়াকে ভিসাই দিতে চায়নি ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। কে জানতো এ দলটাই ১৯৬৬ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটাবে।
তখনো বদলি খেলোয়াড়ের বিধান চালু হয়নি। মাঝমাঠের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় জিয়াকমো বুলগারেল্লির ইনজুরির কারণে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ইতালি। বুলগারেল্লি মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার সাত মিনিট বাদেই গোল করে বসেন উত্তর কোরিয়ার পাক ডু। ১-০ গোলে জিতে যায় তারা। ছিটকে যায় দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি।
আলজেরিয়া ২-১ পশ্চিম জার্মানি (১৯৮২)
১৯৮২ বিশ্বকাপে জার্মানি খেলতে গিয়েছিল ইউরো চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। কার্ল হেইঞ্জ রুমিনেগে, লোথার ম্যাথাউস, উলফগ্যাং ড্রিমলার, হ্যানসি মুয়েলারের মতো তারকায় ঠাসা জার্মান দলকে হারিয়ে দেয় আলজেরিয়া। আফ্রিকান দলটির পক্ষে গোল করেন রাবাহ মাজদার ও লাখদার বেল্লুমি।
মজার ব্যাপার হলো, আলজেরিয়ার কাছে হেরেও সেবার ফাইনালে খেলেছিল জার্মানি।
ক্যামেরুন ১-০ আর্জেন্টিনা
সেবার টুর্নামেন্টের একমাত্র সাব-সাহারান দল ছিল ক্যামেরুন। নতুন দল। প্রথমবার খেলতে আসে বিশ্বকাপে। আর প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেই দিয়েগো ম্যারাডোনার দলকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় ক্যামেরুন। আর্জেন্টিনা অবশ্য ধাক্কা কাটিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাস্বপ্ন ভঙ্গ হয় ম্যারাডোনার।
ফ্রান্স ০-১ সেনেগাল (২০০২)
এশিয়ার মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপের শুরুতেই অঘটন। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দিলো নবাগত সেনেগাল। ৩০তম মিনিটে সেনেগালের হয়ে ঐতিহাসিক গোলটি করেন এল হাজি দিওফ। ফ্রান্স ছিটকে গিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকেই।
জার্মানি ৭-১ ব্রাজিল (২০১৪)
ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখের দিন। ঘরের মাঠে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় সেলেসাওরা।
নেদারল্যান্ডস ৫-১ স্পেন (২০১৪)
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে নেদারল্যান্ডস। স্করপিয়ন হেডে ইতিহাসের অন্যতম সুন্দর গোল উপহার দেন ডাচ স্ট্রাইকার রবিন ভ্যান পার্সি। স্পেন ছিটকে গিয়েছিল প্রথম পর্বেই।
দক্ষিণ কোরিয়া ২-০ জার্মানি (২০১৮)
১৯৩৮ সালের পর প্রথমবার গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যায় জার্মানি। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো জার্মানিকে। কিন্তু ২-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
আপনার মতামত লিখুন :