কে ভেবেছিল একই অঘটন ঘটবে? মানসিকভাবে কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। ৩২ বছর আগে ইতালি বিশ্বকাপে এমনটাই দেখেছিলাম। সেবার ছিলেন ম্যারাডোনা। এবার মেসি। ওমাম বাইকের গোলে ’৮৬- বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা হেরে গিয়েছিল। গোলের পর ২৩ মিনিট মাঠ শাসন করেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিলেন ম্যারাডোনা। আফ্রিকার অখ্যাত এক ফুটবল শক্তির কাছে পরাজয় ছিল অবিশ্বাস্য। যদিও আর্জেন্টিনা সেবার পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে ফাইনালে খেলেছিল।
পশ্চিম জার্মানি জয় পেয়েছিল। এবার কি হবে? মেসি তো হেরে গেলেন আরব অঞ্চলের এক দুর্বল ফুটবল শক্তির কাছে। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম সাক্ষী হয়ে রইলো। সৌদি আরব যারা গণনার মধ্যেই ছিল না। কেউই ভাবেননি এমন হতে পারে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সৌদি আরব নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছে। সালেহ আর সালেম জয়ের নায়ক। এক গোল হজম করেও তারা জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। দশ মিনিটে লিওনেল মেসির পেনাল্টি শট ছিল দর্শনীয়। এর পরপর তিনটি গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন খেলাটা হয়তো ড্র হবে। শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য এই ঘটনাটি ঘটবে তা কোনো হিসেবের মধ্যেই ছিল না। সালেম আল দোসারির গোলের পর ব্রাজিলিয়ান রেডিও জার্নালিস্ট কাস ক্যাস্ট্রো আর্লোর আনন্দ দেখে কে! তিনি রেডিও ভাষ্য দিচ্ছিলেন। তখন মাইক্রোফোনটা হাত থেকে পড়ে যায় আনন্দে। আর্জেন্টিনা তাদের চিরশত্রু। বললেন, ও মাই গড। বিপদ তো সামনে দেখছি। যেকোনো অঘটন ঘটতে পারে আমাদের বেলায়ও। মেসি মাঠ ছাড়লেন কোনোদিকে না তাকিয়ে।
’৯০ বিশ্বকাপের পর ম্যারাডোনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন এমন হলো? তার চোখ দিয়ে তখন গড়গড় করে পানি পড়ছিল। কারণ তিনি ’৮৬-এর বিশ্বকাপের নায়ক। আবার কাপ নিতে এসেছেন ইতালিতে। তখন তিনি স্বীকার করলেন, ক্যামেরুনকে গণনার মধ্যেই রাখা হয়নি। মেসিও কি তাই? শুরুটা তো ছিল চমৎকার, আক্রমণও ছিল ক্ষুরধার। গোল বের করে না নেয়ার খেসারত দিতে হয়েছে তাদেরকে। মেসি এখনো কিছু বলেননি। তবে এটা মানতেই হবে সৌদির গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইজ অসাধারণ কয়েকটি আক্রমণ বানচাল করে দিয়েছেন। আর্লোর পাশে বসে খেলা দেখছিলাম। তিনি বলছিলেন হোয়াট এ গোল! আসলেই তাই। আর্জেন্টিনার দুজন ডিফেন্ডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিমিষেই সালেম বল পাঠান জালে। কাতার বিশ্বকাপ জমে গেল। হট ফেভারিটের তালিকা বদল হলো। ম্যারাডোনা যা পেরেছিলেন তা কি মেসি পারবেন? ফুটবলে এমনটা অস্বাভাবিক নয়। ’৯০ বিশ্বকাপে আরও কিছু রেকর্ড হয়েছিল আর্জেন্টিনার খেলায়। দুটো লাল কার্ড দেখেছিল ক্যামেরুন। এখানেই শেষ নয়। খেলার ৬১তম মিনিটে গোলদাতা ওমাম বাইক লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। আর্জেন্টিনা টানা ৩৬টি ম্যাচ ছিল অপরাজিত। সর্বশেষ তিন বছর আগে তারা ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল। এরপর হারের দেখা পায়নি। সৌদি গেজেট বলছে, সৌদি মেকস হিস্ট্রি। আর্জেন্টাইন সংবাদপত্র LA NACION (The Nation) আর্জেন্টিনার পরাজয়কে দেখছে ভিন্নভাবে। বলছে, আর্জেন্টিনা দলটি কাতার ২০২২ বিশ্বকাপে বালুঝড় এবং দিগন্ত মেঘে জড়িয়েছিল। তবে আর্জেন্টিনা শেষ হয়ে যায়নি। পেছন থেকে সামনে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের। – সৌজন্যে : দৈনিক মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :