আলোচিত ইসলামি চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েক কীভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখছেন? এ নিয়ে হাজারও প্রশ্ন। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি টিভির পর্দাতেই খেলা দেখছেন। মাঠে সরাসরি উপস্থিত থেকে খেলা দেখার একান্ত ইচ্ছে নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে কাতার আসেন ডা. জাকির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে হাজির থাকছেন- এই খবরও চাউর হয়ে যায়। এরপর ভারতের তরফে আপত্তি জানানো হয়। বলা হয়, সত্যি সত্যি যদি ডা. জাকিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাহলে ভারত বিশ্ব ফুটবলের এই মঞ্চ বয়কট করবে। কারণ তিনি ‘ঘৃণা ভাষণ’ ছড়ানোর অভিযোগে ভারতীয় আইনে একজন পলাতক ব্যক্তি। কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারত তা জানিয়ে দেয় কাতারকে। ভারতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়তে পারে। কাতার তখন জানায়, তিনি একজন বে-সামরিক নাগরিক হিসেবে এসেছেন।
তাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ২০শে নভেম্বরের আগেই ডা. জাকির কাতার পৌঁছান। ভারতের পক্ষ থেকে আরও জানিয়ে দেয়া হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখড় তার প্রস্তাবিত কাতার সফর বাতিল করবেন যদি জাকিরকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখা হয়।
অবশেষে জগদীপ ধনখড় বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু সফর কাটছাঁট করে পরদিনই দেশে ফিরে যান। ভারতের সরকারি মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এক বিবৃতিতে জানান, জাকির নায়েক ভারতে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি। মালয়েশিয়ার সরকারকেও জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, কাতারকেও বলা হয়েছে।
কাতারে ছয় থেকে সাত লাখ ভারতীয় কর্মরত রয়েছেন। ৫৭ বছর বয়সী ডা. জাকির নায়েক একজন ভারতীয় নাগরিক। একজন পাবলিক বক্তা। তিনি ইসলাম ধর্মসহ নানা ধর্মের উপর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকেন। ২০১৬ সন থেকে দেশছাড়া। তার বিরুদ্ধে আনা ভারতের অভিযোগ অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে চলেছেন তিনি। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও আনা হয়। বিখ্যাত পিস টিভির মাধ্যমে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নেন এবং অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে মালয়েশিয়া চলে যান। মালয়েশিয়ার সরকার তাকে স্থায়ীভাবে সেখানে থাকার অনুমতি দেয়।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) কাতারের কেন্দ্রীয় মসজিদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাব–এ ডা. জাকিরকে জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেখা গেল। মধ্য আরবের নজদ অঞ্চলের একজন সুন্নি মুসলিম প্রচারক, পণ্ডিত এবং ধর্মতাত্ত্বিক মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাবের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। ২০১১ সালে উন্মুক্ত করা এই মসজিদটি দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক আসেন নিয়মিত। ৩০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদটিতে মুসল্লিগণ ভেতর ও বাইরে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। এরমধ্যে ১১ হাজার ভেতরে এবং ১২০০ মহিলার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
নামাজ শেষে হাস্যোজ্জ্বল জাকির নায়েককে দেখার জন্য মুসল্লিদের মধ্যে রীতিমতো ভিড় লেগে যায়। সবার হাতে থাকা মোবাইলের ক্যামেরা সচল হয়ে ওঠে। যদিও ডা. জাকির কিছুই বলেননি এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মসজিদ ত্যাগ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :