টেলিগ্রাম রিপোর্ট : অনেকে দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে মেসির তুলনা করছেন। বলছেন, মেসি ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এভাবেই দেখতে চাচ্ছে। বাস্তব অবস্থা কি তাই? হয়তো অনেকটাই সত্য। কিন্তু ম্যারাডোনা ম্যারাডোনাই। বিশ্বকাপে বেশি গোল করে মেসি এগিয়ে। তবে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেননি এখনও। না ম্যারাডোনা, না মেসি। বাতিস্তুতা ১০টি গোল করে এখনও শীর্ষে। মেসি এক হাজার ম্যাচে ৭৮৯ গোল করে অনন্য এক রেকর্ডে পৌঁছে গেছেন।
বিশ্বকাপে নয়টি গোল করেছেন এ পর্যন্ত। আর এই বিশ্বকাপে তিনটি। মেসি বীরদর্পে এগিয়ে চলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অসাধারণ গোল করে অগণিত ফুটবলভক্তদের মন জয় করেছেন। তিনি নিজেও এটা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, বিশ্বকাপে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। আমার ভালো লাগে বিশ্বকাপ। ভক্তদের কাছে আমি ঋণী। যারা এতোদূর পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছেন। যারা বসে আছেন আর্জেন্টিনায় তাদের প্রতিও আমার অন্তহীন কৃতজ্ঞতা। বিশ্বব্যাপী যারা আমাকে ভালোবাসেন তারাই আমার শক্তি, সাহস। শুরুতে বলেছিলাম, মেসির সঙ্গে ম্যারাডোনার তুলনা চলে না। মেসির স্টাইল আলাদা। ম্যারাডোনা ছিল বিস্ময়কর এক শক্তি। বল পেলেই সবাই মনে করতেন কিছু একটা হতে যাচ্ছে। বল কাটানোর এরকম টেকনিক এবং দক্ষতা আর খুব কম প্লেয়ারের মধ্যেই ছিল। ৩৫ বছর বয়সী মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বয়স তার জন্য অন্তরায়। মেসি বলেছেন, এই বিশ্বকাপে আমার বাচ্চারা রয়েছে সঙ্গে। একটা ছোট বাচ্চা আছে যে এখনও ওয়ার্ল্ডকাপ কী তা বুঝে না। তবে আমার পরিবার সবসময় আমার সামনে থাকে। আমি খুশি, তাদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্বকাপের মজাটা উপভোগ করছি। বিশ্বকাপ আমার স্বপ্ন। আর্জেন্টিনা অনেকদিন যাবত বিশ্বকাপের ট্রফি দেখছে না। সেই যে ৩৬ বছর আগে ১৯৮৬ সনে ম্যারাডোনা আর্জেন্টাইনদের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিয়েছিলেন! আমার স্বপ্ন তাদের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেয়ার। কাতার বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম গোলের সূচনা মেসিই করেছিলেন। যদিও সে খেলায় সৌদি আরব অঘটন ঘটিয়ে বসে। ২-১ গোলে মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী কাঁদছিলেন মেসির ভক্তরা। এই কান্না কিছুটা থেমেছে। এখনও শেষ হয়নি। যারা মেসিকে ভালোবাসেন তারা চান, মেসির হাতেই যেন কাতার বিশ্বকাপের ট্রফিটা ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সঙ্গে গ্যালারীতে কিম্বা ট্রেনে দেখা হয়। কথা হয়। তাদেরও সংকল্প একই। এবার আমরা ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই। মেসি কেন এতটা জনপ্রিয়? ফুটবল পণ্ডিতরা মনে করেন, বলের উপর মেসির অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ। ভুল পাস খুব কম দেন। নিজে গোল করেন, অন্যকে করার সুযোগ করে দেন। যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করে দিয়েছিলেন মার্টিনেজকে। মার্টিনেজ একবার নয়, পরপর দু’বার সুযোগ হারান। সবাইকে অবাক করে দিয়ে লক্ষহীন শট নেন। যা ফুটবলভক্তরা মেনে নিতে পারেননি। হয়তো বা মেসিও মেনে নিতে পারেননি। যদিও তিনি তা প্রকাশ করেননি। বরং তিনি হাসছিলেন। নেতৃত্বের বাহাদুরি এটাই।
ম্যাজিকম্যান মেসি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যখন আত্মঘাতী গোলে অস্ট্রেলিয়া খেলায় ফিরে এসেছিল। কেউই হয়তো ভাবেননি অস্ট্রেলিয়া খেলার শেষমুহূর্তে গোলের নাটকীয় সুযোগ পেয়ে যাবে। স্নায়ুচাপে তখন বিধ্বস্ত আর্জেন্টিনা। কিন্তু আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ দৈত্যের মতো গোলের গতি রুখে দেন। কব্জায় নিয়ে নেন বলটি। চলতি বিশ্বকাপে এটা এক স্মরণীয় মুহূর্ত। বলটি জালে গেলে খেলার ফলাফল কী হতো এটা বলা আসলেই কঠিন। এশিয়ার অন্যতম ফুটবলশক্তি অস্ট্রেলিয়া । দুর্দান্ত খেলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাইহোক, অস্ট্রেলিয়ার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আর্জেন্টিনা বেঁচে গেছে। স্টারম্যান মেসি অনিশ্চয়তার মেঘ থেকে রেহাই পান। আর্জেন্টাইনদের দাপটে রাতভর দোহা কেঁপেছে। সবার কণ্ঠে একই আওয়াজ- মেসি মেসি মেসি। কোয়ার্টার ফাইনালে মোলাকাত হবে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। কেউ কেউ বলেন, লুইস ভ্যান গালের নেদারল্যান্ডস পুরনো বদনাম কাটিয়ে উঠেছে। আগে নেদারল্যান্ডস মাঠে নামলে বলা হতো- আপনি ঘুমিয়ে থাকুন। গোলের শব্দে ঘুম ভেঙে হয়তো শুনবেন নেদারল্যান্ডস জিতেছে অথবা প্রতিপক্ষ। এখন সেটা নেই। যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে তছনছ করেছে তাতে সহজেই অঙ্ক মেলানো কঠিন। মেসি নিজেও বলেছেন, সামনে কঠিন লড়াই। আর্জেন্টাইন মিডিয়ার একটি মন্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই। Clarin সংবাদপত্র বলেছে, ‘জিততে হলে শুধু ভালো খেলাই নয়, দরকার ভাগ্য ও বুদ্ধির’।
আপনার মতামত লিখুন :