স্টাফ রিপোর্টার: যশোর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন আর নেই। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি গত ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তোকাল করেন( ইন্না লিল্লাহে — রাজিউন)। জানাযা শেষে জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত মরহুম আক্তার হোসেনকে সদর উপজেলার কাজীপুর মুন্সিবাড়ির পারিবাবির কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার কাজীপুর মুন্সিবাড়ির ছেলে আক্তার হোসেন ’৭১ যশোর রনাঙ্গনের একজন সম্মুখসারির মুক্তিযোদ্ধা। কলেজে লেখাপড়ার সময় জাতিরজনকের আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে বন্ধু এ্যাডভোকেট রবিউল আলমসহ তারসহপাঠীদের সাথে মুক্তিমুদ্ধে নাম লেখান আক্তার হোসেন। দেশ মাতৃকার টানে হাতের কলম ফেলে দিয়ে তিনি তুলে নেন ষ্টেন গান আর থ্রি নট থ্রি রাইফেল।
লেখাপড়ায় যেমন ছিলেন মেধাবী যুদ্ধ ক্ষেত্রেও তিনি সেই রকম ছিলেন ক্ষিপ্রতা সম্পন্ন। বিশেষ করে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে আক্তার হোসেনের ছিল আলাদা সুনাম।
দীর্ঘ ৯ মাস সশ্রস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলে এই বীর যোদ্ধা ফের লেখাপড়ার প্রতি মনোনিবেশ করেন। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে প্রবেশ করেন সরকারী চাকুরীতে। জেলা খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পদে চাকুরী করে গত কয়েক বছর আগে অবসরে যান। ।
ব্যস্ততারকারনে তিনি কাজীপুর মুন্সিবাড়ি ছেড়ে যশোর শহরের নলডাঙ্গা রোডে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।
আমৃত্যু তিনি এই বাড়িতেই বসবাস করতেন। অত্যন্ত ছিমছাম স্মার্ট প্রকৃতির এই বীরমুক্তিযোদ্ধা হঠাৎ করে গত ২০ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত্যু বলে ঘোষনা করেন।
চিকিৎসকরা জানান হৃদ রোগে আক্রানস্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
যশোর রানাঙ্গনের এই বীর যোদ্ধার মৃত্যুর খবরে তার বাসভবনে ছুটে যান সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ।
গত ২১ ফেব্রুয়ারী বাদ জোহর নিজ গ্রামের বাড়ি কাজীপুর মুন্সিবাড়ির জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মরহুমের নামাযের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
তার আগে জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত এই বীরের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যশোরের জেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ।
পরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাহামুদুল হাসান ( এসি ল্যান্ড, সদর) এর নেতৃত্বে একদল চৌকষ পুলিশ সদস্য বিউগলে করুন সুর বাজিয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
এসময় যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মাজাহারুল ইসলাম মন্টু, এ্যাড. রবিউল আলমসহ অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গার্ড অব অনার শেষে মরহুমের নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযার নামজে ইমামতি করেন মরহুমের ভাতিজা যশোর মুসলিম এইড পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হোসেন।
আপনার মতামত লিখুন :