টেলিগ্রাম রিপোর্ট : ভ্লাদিমির পুতিনের ভাগ্য ভালো। তার রাশিয়া নেই এবারের বিশ্বকাপে। ২০১৮ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল রাশিয়া। কিন্তু এবার কাতারের টিকিট পায়নি। অগণিত ফুটবলভক্ত রয়েছেন রাশিয়ায়। এবার থাকলে কি হতো। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া বিশ্বব্যাপী চাপের মধ্যে রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে আসলে খেলার মাঠেও রাজনীতি ঢুকে পড়তো। সেটা বোধকরি এড়ানো যেত না। যেমনটা দেখলাম আমেরিকা-ইরান খেলাকে ঘিরে।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত খেলাটি নিয়ে বাইরের উত্তেজনা মাঠে ঢুকেনি। ইরান হেরেছে, জয় পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপের কারণে শিরোনাম বদল হয়েছে পৃথিবীতে। বিশ্বের আনাচে কানাচে পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের ঢেউ। খেলার বাইরে তেমন শিরোনাম নেই। যেমনটা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত শিরোনাম বদল হয়ে থাকে। ইউক্রেনে যুদ্ধ যে থেমে গেছে তা নয়। রাশিয়া ঠিকই আক্রমণ করছে। তবে আক্রমণের ধার তেমন নেই। রাশিয়ান সৈন্যরাও খেলা দেখতে মত্ত। তাদেরও মন নেই যুদ্ধে। ইউক্রেনের নাগরিকরা শতকষ্টের মধ্যেও খেলা দেখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। অনেকেই খেলা দেখতে পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ নেই। নেই স্যাটেলাইট কানেকশন। অনেক স্থানে মোবাইলও চলছে না। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখল অভিযান শুরু করেন। ১৫ লাখ ইউক্রেনের নাগরিক উদ্বাস্তু। বেশির ভাগেরই ঠাঁই হয় পোল্যান্ডে। উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে খেলা দেখার সামান্য সুযোগ রয়েছে। ইউক্রেন ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপে পোল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বলেছে, দুটি দেশই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পোল্যান্ড দিয়েছে আশ্রয়। যুক্তরাজ্য দিয়েছে সামরিক সাহায্য। আমেরিকা ও কানাডাও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের অন্যান্য দেশও।
স্মরণ করা যায় যে, গত মার্চে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে রাশিয়া-ইউক্রেনের খেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইউক্রেন তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ একমাস আগেই তাদের দেশটি দখলে রাশিয়া আক্রমণ শুরু করে। গত অক্টোবরে ইউক্রেনের ফুটবল ফেডারেশন ফিফার কাছে বার্তা পাঠায় ইরানকে বিশ্বকাপে নিষেধাজ্ঞা দিতে। কারণ ইরান রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে ইউক্রেনের সরব উপস্থিতি ছিল। একের পর এক জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। সেই দেশটি এখন খেলা নয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত।
যেমনটা বলছিলাম, রাশিয়া কাতার বিশ্বকাপে থাকলে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়তো দলটি। কারণ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর বেশির ভাগই রাশিয়াবিরোধী। তাই পুতিনের পক্ষে এই সমালোচনা হজম করা কঠিনই হতো। পুতিনের একমাত্র বন্ধু চীনও মাঠে নেই । এবার কোয়ালিফাই করতে পারেনি। তার বিরোধী শক্তি আমেরিকা, ইউরোপ কাতার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সুতরাং পুতিনের দিনটা যে খারাপ যেত এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ওদিকে কাতার বিশ্বকাপের একটি খেলায় অভিনব না হলেও এক উত্তেজক প্রতিবাদের ঘটনাও ঘটেছে। খেলাটি ছিল পর্তুগাল বনাম উরুগুয়ের মধ্যে। ম্যাচ চলাকালে মাঠে ঢুকে হৈচৈ ফেলে দেন একজন ফুটবলভক্ত। খেলার দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ‘সেইভ ইউক্রেন(SAVE UKRAINE)’ টি শার্ট পরে মাঠে ঢুকে পড়েন এই সমর্থক। তার পরনে ছিল নীল রঙয়ের সুপারম্যান টি-শার্ট। বুকে সাদা হরফে লেখা ছিল ‘সেইভ ইউক্রেন’। আর পীঠে লেখা ছিল -সব ইরানী মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা(RESPECT FOR IRANIAN WOMAN)। হাতে ছিল রঙধনু পতাকা। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে সরিয়ে নেন সাথে সাথে। ন্যূনপক্ষে পাঁচ মিনিট খেলাটি থামিয়ে রাখা হয়। পর্তুগিজ সুপারস্টার ফার্নান্দেজ যখন পর্তুগালকে এগিয়ে দেন তখনই ঘটে এই ঘটনাটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই খেলার ম্যাচ রেফারি ছিলেন আলিরেজা ফাগানি। তখন তার মনের অবস্থা কী হয়েছিল তা জানা অবশ্য সম্ভব হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :