মোঃ আবু বক্কার সিদ্দীক, মণিরামপুর, যশোর থেকে॥ মণিরামপুরে জিএইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শতাংশ জমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে রেজিষ্ট্রী করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, নামমাত্র মূল্যে রেজিষ্ট্রীর পর সেখানে বিশাল মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। আর এ জমি রেজিষ্ট্রী করে দেন প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। ফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নোটিশ জারী করেছেন।
জানাযায়, উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দীয়া বাজারের পাশে অবস্থিত জিএইচ পাড়দীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। সরকার গত বছর প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয় বিদ্যালয়ে চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ করেন। বিদ্যালয়ের পাশে বাজারে বিদ্যালয়ের নামে ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ওই জমির ওপর নজর পড়ে ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি এলাকার প্রভাবশালী মাদ্রাসা শিক্ষক কামরুজ্জামানের। ফলে সম্প্রতি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে একটি রেজুলেশন করেন ওই জমির ১০ শতাংশ বিক্রির জন্য। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অথবা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোন অনুমতি না নিয়েই ১০ শতাংশ জমি নামমাত্র মূল্যে প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ধলিগাতী আলিম মাদ্রাসার প্রভাষক কামরুজ্জামানের স্ত্রী সহকারি শিক্ষক হোসনেয়ারা খাতুন বেবি, শ্যালক শরিফুল ইসলাম বিল্লাল ও শ্যালিকা সেলিনা খাতুনের নামে রেজিষ্ট্রী করে দেন। রেজিষ্ট্রীর পর ইতোমধ্যে সেই জমির ওপর পাকা মার্কেট নির্মাণ শুরু করেছেন সভাপতি কামরুজ্জামান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় স্কুলের অভিভাবক সদস্য নজরুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিনের সাথে। তারা অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সভাপতি হয়ে কামরুজ্জামান স্কুলের ১০ শতাংশ জমি স্ত্রী, শ্যালিকা ও শ্যালকের নামে লিখে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রেজিষ্ট্রীর পর সেখানে সভাপতি বিশাল মার্কেট নির্মাণ শুরু করেছেন। ইউপি সদস্য সবুজ হোসেন জানান, স্কুলের জমি লিখে নেওয়ার ঘটনা তিনি এর আগে কোনদিন শোনেননি। অপর অভিভাবক ইউনুচ আলী জানান, নামমাত্র মূল্যে জমি লিখে নিলেও একটি টাকাও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক স্কুলের ফান্ডে জমা দেননি। তবে প্রধান শিক্ষক জানান, ওই জমি বিক্রির প্রয়োজন ছিল। ফলে ম্যানেজিং কমিটির সম্মতিতে বিক্রি করা হয়েছে। তবে টাকার হিসেব তিনি জানেননা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, ওই জমি বিক্রি করে পাশে স্কুলের নামে আর একটি জমি কেনা হয়েছে। আর এ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার স্কুলের জমি বিক্রির অভিযোগ পেয়ে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ম্যানেজিং কমিটি ইচ্ছা করলেই প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রি করতে পারেনা। বিক্রি করতে হলে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর অথবা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমতি লাগে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবীর হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে আগামি ২৩ নভেম্বর স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। পরবর্থীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :