রোনালদো বিশ্বকাপ শুরুর আগেই এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ওদিকে তার বন্ধু লিওনেল মেসি হেরে গিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত। রোনালদোর চলতি বিশ্বকাপ শুরু হবে আগামীকাল। লড়াই হবে ঘানার সঙ্গে। ফিফা র্যাংকিংয়ে পর্তুগাল ৯ নম্বরে আর ঘানা রয়েছে ৬১তে। এই মুহূর্তে এটা কোনো আলোচনার বিষয় নয়। ফলাফল কেমন হবে তা নিয়েও তেমন কৌতূহল নেই। রোনালদো এখন নয়া বিতর্কে। তার প্রিয় ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি খারিজ হয়ে গেছে। অবশ্য দু’পক্ষের সম্মতিতে।
রোনালদো নিজেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার পথ খুঁজছিলেন। কোচ এরিক টেন হ্যাগের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না শুরু থেকেই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্বর্ণযুগে রোনালদো ছিলেন অন্যতম সৈনিক। কোচ তখন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। এরপর রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে চলে যান। শেষ ঠিকানা ছিল জুভেন্টাস। সেখান থেকেই গত মৌসুমে যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। তার যাবার কথা ছিল ম্যানচেস্টার সিটিতে। কিন্তু ফার্গুসনের অনুরোধ তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। ৩৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার নিজেকে বিতর্কের মধ্যে রাখতেই ভালোবাসেন। মঙ্গলবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এক বিবৃতিতে রোনালদোর সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিলের কথা প্রকাশ করেছে। রোনালদো বলেছেন, আই লাভ ম্যানচেস্টার। আমি ম্যানচেস্টারকে ভালোবাসি, ভালোবাসি অগণিত ফ্যানদের। আমি টিম ছাড়লেও ভালোবাসার কমতি হবে না। এখনই উপযুক্ত সময় নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণের। চ্যালেঞ্জটা কি? তিনি কি নিউক্যাসেল ইউনাইটেডে যোগ দেবেন? নাকি সৌদি আরবের আল নাসের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হবেন? দুটো ক্লাবেরই মালিক সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। কাতার বিশ্বকাপের মিডিয়া সেন্টারগুলোতে নানামুখি আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, মোহাম্মদ বিন সালমান তাকে চাচ্ছেন। তার এজেন্টও এরকম ইঙ্গিত করেছেন। পর্তুগাল শিবিরে অবশ্য অন্য আলোচনা। আমরা খেলতে এসেছি। রোনালদো আমাদের শক্তি এবং সাহস। এই মুহূর্তে দলবদল যদি মুখ্য আলোচনায় থাকে তাহলে রোনালদো কি করবেন? তিনি তো অস্থির থাকবেন ভবিষ্যতের কথা ভেবে। রোনালদো কি চুপ করে বসে থাকার লোক? তিনি বলেছেন, এটা খেলারই অংশ। আমি আছি, থাকবো। মাঠে সবকিছু উজাড় করে দেব।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার আগে যে সাক্ষাৎকার নিয়ে এতসব বিতর্ক তাতে রোনালদো কি বলেছিলেন? আসুন দেখা যাক পরখ করে। তিনি বলেছিলেন, কোচ এরিক টেন হ্যাগকে তিনি পছন্দ করেন না। কারণ তিনি তার প্রতি কোনো সম্মানই দেখান না। বরং ক্লাবটি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আমার সঙ্গে। ম্যাচের পর ম্যাচ আমাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র কোচের একগুয়েমির কারণে।
শুধু কোচ নন, ক্লাবটির কয়েকজন কর্মকর্তাও এরসঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। প্রথম মৌসুমের শেষ দিকে রোনালদো তার ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কারণ তিনি সবসময় এক নম্বর ক্লাবেই থাকতে পছন্দ করেন। তার ভাষায়, ইউনাইটেড যখন গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার টিকিট পেল না তখন থেকেই তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। এই যখন অবস্থা বিলেতের ডেইলি মেইল খবর দেয়, সৌদি আরবের আল হিলাল ক্লাবটি তাকে চুক্তিবদ্ধ করতে চাচ্ছে। ৩৫ কোটি ইউরোতে দু’বছরের চুক্তি। কিন্তু তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। যদি চুক্তিবদ্ধ হতেন তাহলে তিনিই হতেন ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলার। মরগানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোনালদো নিজেই বলেছেন, শুধু সৌদি ক্লাব নয় আরও বেশ কিছু ক্লাব তাকে অফার করেছিল। কেন জানি মনে হচ্ছিল, যেখানে আছি সেখানেই থাকবো। এই মুহূর্তে দলবদল করা ঠিক হবে না। কোচ এরিক টেন হ্যাগ চাচ্ছিলেন আমি যাতে দল ছাড়ি। এ নিয়ে আমি নিজেই নিজের সঙ্গে লড়াই করেছি। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত আমাকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে গুডবাই বলতে হলো। বিশ্বকাপ চলাকালেই কি তিনি কোনো ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হবেন? নাকি আরও সময় নেবেন এটা এখনো স্পষ্ট নয়। ফুটবল পণ্ডিতরা বলছেন আলোচিত, নন্দিত এই ফুটবলার যদি ম্যাজিক দেখাতে পারেন তাহলে তার নতুন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। নাহলে তার ভবিষ্যৎ কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ওদিকে রোনালদো বিতর্কের মধ্যেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক আমেরিকার Glazer পরিবার ক্লাবটি বিক্রি করার কথা ঘোষণা করেছে। ২০০৫ সনে পৃথিবীর বিখ্যাত এই ক্লাবটি তারা কিনে নিয়েছিল। কত টাকায় বিক্রি হবে ক্লাবটি? কারাই বা কিনবে? দাম চাওয়া হতে পারে ৬ বিলিয়ন ডলার। একসময় বৃটিশ বিলিয়নিয়ার জিম রেটক্লিপ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তখন অবশ্য Glazer পরিবার বিক্রিতে রাজি ছিলেন না। এখন নতুন বাস্তবতা।
আপনার মতামত লিখুন :