টেলিগ্রাম রিপোর্ট : আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এরা হলেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা। শুধু আওয়ামী লীগের ভিতরে না, জাতীয় পর্যায়ে এদের রয়েছে আলাদা ইমেজ, জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা। এতদিন তাঁরা আড়ালে ছিলেন, সাইডলাইনে বসেছিলেন, রাজনৈতিক কর্মকা-ে এদেরকে খুব একটা সম্পৃক্ত দেখা যায়নি। বরং তাদের গুটিয়ে থাকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন হয়েছিলো। কিন্তু অবশেষে আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতারা মাঠে নামছেন, যাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের এ টিম। যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে কাজ করেছেন, দলের গ-ি পেরিয়ে পেরিয়ে জাতীয় নেতা হিসেবে নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করেছেন। রাজনৈতিক সংকটের মুহূর্তে সেই নেতারা এখন মাঠে নামতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তোফায়েল আহমেদ মাঠে নেমেছেন এবং বাকি যে সমস্ত জনপ্রিয় হেভিওয়েট নেতারা আছেন তারাও এখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। রাজনীতিতে যখন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে, বিএনপি যখন সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে সেই সময়ে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের মাঠে নামাটা রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
আওয়ামী লীগের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা তোফায়েল আহমেদ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত যুবলীগের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি বিএনপির কেবল সমালোচনা করেন নাই বরং তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বহুল উচ্চারিত ‘খেলা হবে’ স্লোগানেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন খেলা হবে কোনো রাজনৈতিক স্লোগান হতে পারে না। তার এই বক্তব্য সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে। মূলত এটিই হলো একজন জনপ্রিয় জাতীয় নেতার বৈশিষ্ট্য, যিনি জনগণের অভিপ্রায় এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সামনে তুলে আনতে সক্ষম হন। তার এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকেই অনেকে বলতে শুরু করেছেন যে, এখন এই রাজনীতির চ্যালেঞ্জিং সময় তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরীর মতো নেতাদের বেশি প্রয়োজন, তারা মাঠে নামবে।
তোফায়েল আহমেদের যুবলীগের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন আমু মাঠে নামছেন। তাকে ১৪ দলের মান ভাঙ্গানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এই দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তিনি ১৪ দলের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সময়ের মধ্যে থেকে একটা সময় বের করা হবে। এরপর চলতি মাসেই ১৪ দলের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন, এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বৈঠকের দিন তারিখ শুরু হয়নি।
আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট নেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীও সক্রিয় হচ্ছেন এবং তাকেও এখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেতে পারে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কাউন্সিল উপলক্ষে সারাদেশে আওয়ামী লীগের যে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই সম্মেলনগুলোতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং অন্যান্য নেতারাই যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু দলের সিনিয়র এই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে দূরে রাখা হচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এই সমস্ত পুরনো এবং জনপ্রিয় নেতাদেরকে নিয়ে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এর ফলেই রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ, এই সমস্ত নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা আওয়ামী লীগের বর্তমানে মাঠে ক্রিয়াশীল এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত বক্তৃতা দেওয়া নেতাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাই এই সঙ্কটে এই সমস্ত নেতা যাদেরকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা এ টিমের সদস্য মনে করেন তারা বিভিন্ন বক্তব্য দিলে সরকার এবং আওয়ামী লীগ অনেকটাই স্বস্তিতে থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :