টেলিগ্রাম রিপোর্ট : মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (ইউপিএম)-এর ৪৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান এবং কেদার রাজ্যের আলবুখারী আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিয়েছেন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ উপলক্ষ্যে ড. ইউনূস গত ২৪ নভেম্বর চার দিনের সফরে মালয়েশিয়া গমন করেন। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেংকিং ২য় স্থানের অধিকারী ইউ পি এম দেশটির ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করে। বুধবার ঢাকাস্থ ইউনূস সেন্টারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া’র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সেলাংগর রাজ্যের অধিকর্তা। ঐদিনই সন্ধায় প্রফেসর ইউনূস তাঁর সম্মানে সেলাংগর রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী দাতো সেরি হাজী আমিরুদ্দিন শারি আয়োজিত এক ভোজসভায় যোগ দেন। মূখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজ্যে দরিদ্রদের জন্য কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে একটি ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক গঠন করা যায় সে বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসের পরামর্শ চান। প্রফেসর ইউনূস ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া আয়োজিত একটি জন-বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন যেখানে তিনি তাঁর ‘তিন শূন্য’ অর্থাৎ শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের ধারণা ব্যাখ্যা করেন।
এছাড়াও এই সফরে প্রফেসর ইউনূস ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ায় একটি ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালে তাঁর এই বিশ্ববিদ্যালয় সফরের সময় এই সেন্টারটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর প্রফেসর ইউনূস কেদাহ্ রাজ্যের আলোর সেতার-এ অবস্থিত আলবুখারী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর প্রফেসর ইউনূস। তিনি গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও সভাপতিত্ব করেছিলেন। সামাজিক ব্যবসার নীতিতে পরিচালিত আলবুখারী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি একটি অলাভজনক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় । বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরো দর্শন, রূপকল্প ও লক্ষ্য এই নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত যা একটি তিন শূন্য’র পৃথিবী গড়ে তুলতে পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে তার ছাত্রদের গড়ে তোলার কাজে নিবেদিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মালয়েশিয়া ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার ৫২টি দেশ থেকে বর্তমানে প্রায় ১,০০০ ছাত্র অধ্যয়ন করছে। ছাত্রদের ৯০ শতাংশই বিদেশী। ছাত্রদের সকলকেই আলবুখারী ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। দরিদ্র পরিবার থেকে মেধাবী ছাত্রদের বাছাই করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া হয় যাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার সামাজিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার পাশাপাশি তার লেখাপড়ার উচ্চ মান বজায় রাখতে পারে। তার সমাবর্তন বক্তৃতায় প্রফেসর ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘তিন শূন্য’র পৃথিবী সৃষ্টির লক্ষ্যের উপর বিশেষভাবে জোর দেন।
আলবুখারী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জন্মলগ্ন থেকেই সেখানে একটি ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকক-ভিত্তিক ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র সাথে যৌথভাবে একটি ‘ইউনূস মাস্টার্স ডিগ্রী ইন সোশ্যাল বিজনেস এন্ড অনট্রাপ্রিনিয়রশীপ’ কোর্স চালু প্রস্ততি চলছে। প্রফেসর ইউনূসের আলবুখারী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে অবস্থানকালে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি প্রতিনিধিদল এই কোর্স চালুর প্রস্তুতিমূলক বিষয়গুলি চূড়ান্ত করতে সেখানে আগমন করেন। ইউনূস সেন্টারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সফরের শেষ দিন প্রফেসর ইউনূস কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ‘মালয়েশিয়ান গ্রীণ টেকনোলজি এন্ড ক্লাইমেট” -এর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ভাষণ দেন। মালয়েশিয়ান সরকারের পরিবেশ ও পানি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এই সংস্থাটি দেশটিতে ‘সবুজ বৃদ্ধি’, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও সবুজ জীবন প্রণালী গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত। এই লক্ষ্যে সংস্থাটি নবীন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সামাজিক ব্যবসা তৈরী করে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ান গ্রীণ টেকনোলজি এন্ড ক্লাইমেট প্রফেসর ইউনূসের সফরের সময় ‘মাই হারাপান’ এর সাথে যৌথভাবে কয়েকটি সভার আয়োজন করছিল। মাই হারাপান সামাজিক ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে ২০১৩ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় কাজ করে আসছে। দেশটির বিভিন্ন এলাকা থেকে সংস্থাটির নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রফেসর ইউনূসের সাথে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সারাদিন বৈঠক করেন। প্রফেসর ইউনূস তাঁর ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সেলাংগরের মূখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে কর্মকর্তারা মূখ্যমন্ত্রী কর্তৃক গৃহীত চলমান বিভিন্ন প্রকল্প বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :