ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

যশোরের নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজের নেতৃবৃন্দের মত বিনিময়


টেলিগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ১:০৪ পূর্বাহ্ণ / ২৭২২০
যশোরের নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজের নেতৃবৃন্দের মত বিনিময়

স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের নবাগত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সাথে বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ যশোরের নেতৃবৃন্দ মত বিনিময় করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ অধিকারী, যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অসীম কুমার কুন্ডু, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক,বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ যশোরের আহবায়ক মৃনাল কান্তি দে, যশোরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভোলা নাথ সাহা, সনদ কুমার সাহা,দিলীপ কুমার বিশ^াস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন এবং মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে দেশের সকল মানুষের স্বাধীন ভাবে ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই ১৯৭৮ সালে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বীর উত্তম সি আর দত্ত পূজা উদযাপন
পরিষদ গঠন করেছিলেন। এটা ছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন। কিন্তু গত ১৫ বছরে এই সংগঠনকে কতিপয় স্বর্থবাদী নেতা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করেছিল। এই সংগঠনের বহু নেতা আওয়ামীলীগের নির্বাচনী জনসভার মঞ্চে উঠে সরাসরি নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছেন। দেশের দেড় কোটি সনাতন ধর্মের ভোটারকে নৌকার ভোট ব্যাংক হিসেবে প্রচার করে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা রানা দাস গুপ্ত ও তার দোসর বিশেষ করে যশোরের নেতা দীপংকর দাস রতন, তপন ঘোষ, রতন আচায্যদের মতো নেতারা কোটি কোটি টাকার ভোট বাণিজ্য করেছেন। একই সাথে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ভাবে যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা মন্দির, শশ্মানসহ সনাতন ধর্মের মানুষের সহায় সম্বল লুটপাট করে দখল করেছেন। বিশেষ করে শ্রী শ্রী কালী মন্দির, মুড়লী শ্রী শ্রী জোড়া শিব মন্দির, বেজপাড়া পূজা মন্দির, নীলগঞ্জ মহাশশ্মানসহ জেলার বহু সনাতন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও উন্নয়নের নামে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির জেলা সভাপতি দীপংকর দাস রতন ও সাধারণ সম্পাদক তপন ঘোষ, রতন আচায্যসহ অনেকেই লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেছেন। একই সাথে বিশেষ করে প্রতি বছর দূর্গা পূজার সময় সরকারী ভাবে প্রতিটি পূজা মন্ডবে ৫০০ কেজি করে জিআর প্রকল্পের চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। কিন্তু জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ মন্দির বা মন্ডপ গুলোর পক্ষে চাল বরাদ্ধের ডিও বিক্রি করে প্রতিটি পূজা মন্ডপ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্নসাৎ করেছেন বলেও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে এই দূর্নীতিবাজ ও অর্থ আত্নসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান উপস্থিত সনাতন সমাজের নেতৃবৃন্দ। এর পাশাপাশি আসন্ন দূর্গা পূজায় প্রতিটি পূজা মন্ডপের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নামে চাল বরাদ্ধের ডিও প্রস্তুত ও স্ব স্ব মন্দির কমিটির নেতাদের হাতে উক্ত ডিও হস্তান্তর করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানান সনাতন সমাজের নেতৃবৃন্দ। একই সাথে নেতৃবৃন্দ দাবি জানান আসন্ন দূর্গা পূজায় সরকারী বরাদ্ধের কোন চালের ডিও যেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের হাতে দেওয়া না হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ একটি ধর্মীয় সংগঠন। এর সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। অথচ একটি ধর্মীয় সংগঠনকে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে যশোরের নের্তৃবৃন্দ বছরের পর বছর ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করেছে। তারা পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে সরকারী বেসরকারী নানা রকমের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে নিজেরাই লাভবান হয়েছেন। বিভিন্ন পূজা পার্বন ও মন্দির এবং শশ্মানের উন্নয়নের নামে লাখ লাখ টাকা তছরুপ করেছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতৃবৃন্দ। এসব বর্ণপ্রথাবাদী নেতাদের দ্বারা সনাতন সমাজের সদস্যরা গত ২ যুগ চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণ গোত্রের বিভাজন তুলে গোটা সনাতন ধর্মের মানুষকে ব্যক্তি স্বার্থবাদীরা দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছিলেন। এক পক্ষে শোষক আর অপর পক্ষে শোষিত সমাজ। কিন্তু নেতাদের দ্বারা নির্যাতন, অত্যাচার আর অনাচারের ভয়ে এতো দিন সনাতন সমাজের নির্যাতিতরা মুখ খুলতে সাহস পাননি। কিন্তু জুলাই মহাবিপ্লবের মাধ্যমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নতুন করে বাঁচার প্রেরণা যুগিয়েছে। তাই সময় এসেছে মন খুলে মনের কথা ব্যক্ত করার। সনাতন সমাজের প্রতি সব রকমের অন্যায় অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে তাই প্রতিবাদ গড়ে তুলতেই জন্ম হয়েছে এই বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ, যশোর নামের একটি নতুন সংগঠনের। যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মের নামে, গোত্রের নামে, বর্ণের নামে, জাত পাতের ধুয়া তুলে যেখানেই সনাতন সমাজের মানুষের ওপর জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন, অন্যায় ,অত্যাচার করা হবে সেখানেই বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজের নেতাদের কন্ঠ গর্জে উঠবে। আমরা আর কোন বৈষম্যের শিকার হতে চাই না। আমরা চাই সকল ক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায় বিচার। আমরা এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যে সমাজ ব্যবস্থার মুল মন্ত্র হবে ন্যায় বিচার। অন্যায়-অত্যাচার ও দূর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে এই দেশ আমাদের চৌদ্দ পুরুষের জন্মস্থান। এখানে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করার অধিকারও সমান। ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কতিপয় নেতা পূজা উদযাপন পরিষদের মতো একটি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করেছেন। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এদেেশর সনাতন ধর্মের মানুষ। সেই বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মনেই করেন, দেশের সকল সনাতন ধর্মের মানুষ তাদের ভোটা ব্যাংক, কর্মী ও সমর্থক। ফলে তাদের ওই বিশেষ রাজনৈতিক দলের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর এ কারনেই বিগত বছর গুলোতে ওই বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সনাতন সমাজের লোকজনকে তাদের গোলাম, পেয়াদা মনে করে নানা ভাবে অনাচার আর অত্যাচার করেছে। কিন্তু আর নয়; সময় এসেছে ঘুরে দাড়ানোর। আমরা কোন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে বাঁচতে চাই না। আমরা আমাদের মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় নিজেদের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। আর সেই অধিকার আদায়ের সংগ্রামই হচ্ছে আজকের বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ, যশোর নামের এই সংগঠনের আত্নপ্রকাশ। পর্যায়ক্রমে এই সংগঠনকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে দিতে চাই। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এই বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজের কমিটি গঠন করে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি ও কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য।
মত বিনিময় সভায় বক্তারা আরো বলেন, যশোরসহ সারা দেশের সনাতন সমাজের মানুষ চরম ভাবে বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য দূর করতে ১৯৭৮ সালে বীরমুক্তিযোদ্ধা সি আর দত্ত পূজা উদযাপন পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মের মাধ্যমে সনাতন সমাজের মানুষের মধ্যে সমতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সেই ধর্মীয় সংগঠন কালে কালে নেতৃত্বের হাত বদলের মাধ্যমে আজ তা আওয়ামীলীগ নামক রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের ধারনায় হয়ে গেছে এদেশের সনাতন সমাজের মানুষ মানেই তারা আওয়ামীলীগ কওে এবং আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক। এই ধারনার পরিবর্তন ঘাঁতেই হবে। মনে রাখতে হবে সনাতন সমাজের মানুষদেও নিজস্ব একটা মতামত আছে। এরা কারোর কথায় ভোট দেয় না, তারা নিজেদেও পছন্দ মতো নেতা নির্বাচন করতে পারে।এদেশে সকল ধর্মের মানুষের যেমন ধর্ম পালনের স্বাধীনতা আছে তেমনি গণতন্ত্র চর্চা, মতামত ব্যক্ত করা ও ভোটাধিকার প্রয়োগের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। কিন্তু দেশের ও যশোরসহ সারা দেশের সব জেলা উপজেলা বা পৌর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার সনাতন সমাজের সুবিধাবাদী কিছু নষ্ট রাজনৈতিক নেতার কর্মকান্ডের কারনে দেশের সকল সনাতন ধর্মের মানুষ আজ বৈষম্যের শিকার। সনাতন সমাজের নামে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে তরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন, কিন্তু তাতে করে সনাতন সমাজের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।তাই সময় এসেছে প্রতিবাদ করে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা।
মত বিনিময় সভায় সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোর হচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বন্ধনের এক মিলন মেলা। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে দারুন বোঝাপড়া আছে। রাজনীতি বা ধর্মীয় বা সামাজিক সংগঠন করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। যখন মানুষ দীর্ঘ দিনধরে বৈষম্যের শিকার হতে থাকে তখন মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের ভাষার জন্ম হয়। যদি সে মুন খুলে তার সেই ভাষার ব্যক্ত করতে না পারে তবে তা বিপ্লবে পরিণত হয়। ৩৬ জুলাই দেশে যে মহাবিপ্লব সংঘটিত হয়েছে ; যা এই বৈষম্য আর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশের সকল স্তরের মানুষের বুকের মধ্যে দীর্ঘদিন জমে থাকা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। ফলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনে শত শত মানুষকে হত্যা করেও ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তাদে শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে কোথাও কারোর ওপর অন্যায় অত্যাচার বা বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। অহংকার দেখানো যাবে না। জোর করে কারোর সম্পদ বা সম্পত্তি জবর দখল করা যাবে না। আর যারা এগুলো করবে তাদের পরিণতিটাও একই হবে।
তিনি বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ, যশোরের নেতৃবৃন্দকে অগ্রীম শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আপনাদের জন্য জেলা প্রশাসনের দরজা সব সময় খোলা। আপনারা যারা দীর্ঘ দিন নানা ভাবে অন্যায় অত্যাচার আর বৈষম্যের শিকার তারা আর যাতে নতুন করে কোন সংকটে না পড়েন তার প্রতি জেলা প্রশাসনের সার্বক্ষনিক নজর থাকবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ , যশোরের আহবায়ক মৃনাল কান্তি দে নতুন এই সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন তৈরীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের হাতে সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং গঠনতন্ত্রের খসড়া তুলে দেন। পওে তার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন বৈষম্য বিরোধী সনাতন সমাজ যশোরের অন্যতম নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শ্রী সন্তোয় অধিকারী, ও সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বাবু অশোক কুমার কুন্ডুসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

 

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031