টেলিগ্রাম রিপোর্ট : চলতি আমন মৌসুমে যশোর জেলায় প্রতি মেট্রিক টন ৪২ হাজার টাকা দরে অর্থাৎ কেজি প্রতি চাল ৪২ টাকা দরে ৯ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টন আমন চাল এবং প্রতি মেট্রিক টন ২৮ হাজার টাকা দরে অর্থাৎ ২৮ টাকা কেজি দরে ৪ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করে দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। গত ১৭ নভেম্বর থেকে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এই জেলার ১৯৭ জন মিলারের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত মাত্র ১০ মিলারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করেছে যশোর খাদ্য বিভাগ। সময় পেরিয়ে গেলেও দফায় দফায় বৈঠক করেও চুক্তি সম্পাদনে সফল হতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। যার প্রেক্ষিতে চালকল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মেয়াদ ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে কাগজে কলমে সংগ্রহ অভিযান শুরুর কথা বলা হলেও বাজার দরের উর্ধ্বগতির কারণে কৃষক এবং মিলাররা গুদামমুখি হতে চাইছেন না আর এই অনীহার কারণেই এখনও আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন ধান-চাল সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় সরকার চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি ৪২ টাকা অর্থাৎ প্রতি মেট্রিক টন ৪২ হাজার টাকা দরে যশোর জেলায় ৯ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টন আমন চাল সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়েছে। একই ভাবে এই জেলায় ২৮ টাকা কেজি অর্থাৎ ২৮ হাজার টাকা দরে ৪ হাজার ৯৯৮ টন ধান সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করে দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। প্রথম পর্যায়ে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মিলারদের সাথে চুক্তির মেয়াদ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বাজার দরের উর্ধ্বগতির কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মিলারদের সাথে চুক্তির টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু তাতেও তেমন সাড়া মিলছে না বলে মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর সময় পার হতে চললেও ১০ শতাংশ মিলারকে এখনও চুক্তির আওতায় আনা যায়নি। যে কারণে মিলারদের সাথে চুক্তির মেয়াদ ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাতেও কোন সাড়া মিলছে না। যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দফায় দফায় মিলারদের সাথে বৈঠক করছেন। কিন্তু চুক্তি সম্পাদনে মিলারদের অনাগ্রহের কারণে জেলা এবং উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তারা তেমন কোন সাড়া পাচ্ছেন না বলে সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র জানায়, চলতি সংগ্রহ মৌসুমে যশোর সদরে ৯১৯ মেট্রিক টন ধান এবং ২ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়েছে। এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ২৯টি। বাঘারপাড়ায় টার্গেট দেয়া হয়েছে ৫৯৯ মেট্রিক টন ধান এবং ৪১৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের । এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ১১টি। অভয়নগরে টার্গেট দেয়া হয়েছে ২৬৮ মেট্রিক টন ধান এবং ২ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন চাল । এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ২১টি। মণিরামপুরে টার্গেট দেয়া হয়েছে ৩২৬ মেট্রিক টন ধান এবং ৮৫৪ মেট্রিক টন চাল । এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ৩৩টি। কেশবপুর উপজেলায় টার্গেট দেয়া হয়েছে ৮৪২ মেট্রিক টন ধান এবং ২৫৯ মেট্রিক টন চাল । এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ২৯টি। ঝিকরগাছায় টার্গেট দেয়া হয়েছে ৬৩৭ মেট্রিক টন ধান এবং ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল । এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ১১টি। র্শাশায় ৭৫৫ মেট্রিক টন ধান এবং ২ হাজার ২৪৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়েছে। এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ২৮টি। চৌগাছা উপজেলায় ৬৫২ মেট্রিক টন ধান এবং ৫৩৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়েছে। এই উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল আছে ৩৫টি।
সব মিলিয়ে যশোর জেলার ৮ উপজেলায় চুক্তিযোগ্য মিল রয়েছে ১৯৭ টি। যার মধ্যে হাস্কিং রাইস মিল রয়েছে ১৭২ টি, মেজর রাইস মিল একটি এবং অটেরাইস মিল রয়েছে ২৪টি। যার মধ্যে মাত্র ১০টি রাইস মিলের মিলারের সাথে চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এতে চলতি আমন সংগ্রহ অভিযান সফল হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, গত বোরো সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলা খাদ্য বিভাগ ২৪৯টি মিলের সাথে চুক্তি করেও টার্গেট পূরণ করা যায়নি। গত বোরো মৌসুমে চুক্তি না করার অপরাধে ৮টি রাইস মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। চুক্তিবদ্ধ ২৪৯টি মিলের মধ্যে ১৬৩টি মিলার ৮০ শতাংশ বা তার অধিক চাল সরবরাহ করতে সমর্থ হওয়ায় তাদের জামানতের অর্থ ফেরত দেয়া হয়। ৫৫ মিলার আংশিক চাল সরবরাহ করায় অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের জামানতের অংশ বিশেষ বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর ৩১ জন মিলার কোন চাল সরবরাহ না করায় তাদের জামানতের সম্পূর্ণ অর্থ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কেশবপুর, মণিরামপুর, অভয়নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মিলারদের সাথে বৈঠক করেছি। অন্যদের সাথেও বৈঠক করে যাচ্ছি। অটোরাইস মিলের মালিকরা বৈঠকে অংশ নিলেও হাস্কিং মিলের অধিকাংশ মালিক বৈঠকেও আসছেন না। যশোর সদরে একজন হাস্কিং মিলারও বৈঠকে অংশ নেননি। সংগ্রহ অভিযান সফল করতে আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর বুধবার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে বৈঠক করা হবে। সংগ্রহ অভিযান সফলের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংগ্রহ) বিভাগের পরিচালক মো. রায়হানুল কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি জানান, ‘সংগ্রহ অভিযান সফলে খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। সফল হবে না এমন মন্তব্য করার সময় আসেনি। ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে । এই সময়ের মধ্যে মিলারদের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
আপনার মতামত লিখুন :