ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় অবহেলা ডাক্তারদের


টেলিগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ৯:০৪ অপরাহ্ণ / ২৭২২০ ০
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় অবহেলা ডাক্তারদের
যশোর অফিস : প্রতিদিনই যশোর হাসপাতালে সকাল ১১ টায় কোনো রোগী ভর্তি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় অন্তত ২২ ঘণ্টা। পরদিন সকাল ৯ টার আগে ‘বিশেষজ্ঞ’ সিনিয়র চিকিৎসকরা হাসপাতালে প্রবেশ করেন না। শুধু সকালে ওয়ার্ডে যান কিন্তু চিকিৎসা না দিয়ে রোগীদের দর্শন দেন তারা। চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্বটা পালন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা, যারা দুপুর ও রাতে ও রোগীদের কাছে যান নিজেদের শিক্ষাকে ঝালিয়ে নিতে। সকালে সিনিয়র চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে দেরি করলেও বের হতে দেরি করেন না। বেলা ১১টা বাজার আগেই ওয়ার্ড ছাড়েন তারা। আবার কেউ কেউ ঐ সময় হাসপাতালই ত্যাগ করেন। তখন দিনভর ভর্তি রোগীদের প্রধান ভরসায় থাকেন সেবিকারা। এই অনিয়ম চলে আসছে দিনের পর দিন ‌। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তারা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ‘রোগী দেখা বাণিজ্যে’ ব্যস্ত থাকেন।হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে যশোর ছাড়াও নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা চিকিৎসাসেবা নেন।বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ভর্তি থাকেন ১৯৫ থেকে ৩৫০ রোগী। জরুরি চিকিৎসাসেবার কারণে এ অঞ্চলের সাধারণ রোগীদের ভরসাস্থল এ হাসপাতালটি। অথচ এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শুধুমাত্র সকালে একবার ওয়ার্ডে রাউন্ডে যান। তবে তখনো তারা অনেক ব্যস্ততা দেখান। এজন্য রোগীরা সেভাবে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন না। স্বাভাবিক ভাবেই রোগীরা হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। সেবাবঞ্চিত হয়ে অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ক্লিনিক বাণিজ্য জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে হাসপাতালে আসেন শুধুমাত্র ক্লিনিকের রোগী ধরতে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের তারা অথবা তাদের নিয়োজিত দালালরা বুঝিয়ে দেন সরকারি হাসপাতালে থাকলে তারা সুচিকিৎসা পাবেন না। তাদেরকে ক্লিনিকে যেতে ইঙ্গিত দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র সেবিকা ও চি‌কিৎসক জানান, নিয়ম অনুযায়ী রোগী ভর্তির পর রোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডাক্তার সহকারী রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে ইন্টার্ন চিকিৎসক আসবেন রোগীকে দেখতে। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে ব্যবস্থাপত্র ও ইন্টার্নদের ধারণা ও করণীয় সম্পর্কে জানাবেন। সহকারী রেজিস্ট্রার বুঝতে না পারলে তিনি সহকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে কল করবেন। কল পেয়ে তিনি হাসপাতালে এসে রোগী দেখে পরবর্তী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জানিয়ে বোর্ডের মাধ্যমে রোগীর ব্যবস্থা প্রদান করবেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এখানেই রয়েছে অনিয়মের বিশাল এক বাণিজ্য।
প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে পরদিন সকাল ৯ টার আগ পর্যন্ত রোগী আসলে ইন্টার্ন চিকিৎসরা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। অনাকাঙ্কিত ঘটনা এড়াতে ইন্টার্নরা মোবাইলে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। ইন্টার্নরা মোবাইলে রোগীর পরিস্থিতি জানানোর পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মোবাইলেই রোগীর জন্য চিকিৎসার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ফাইলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতের লেখায় এমন অসংখ্য নজির প্রতিদিনই পাওয়া যাবে বলে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে ‘দিনভিত্তিক সম্মানী’ ও পেয়ে থাকেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউ কেউ।
আরেক সেবিকা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দায়িত্ব রোস্টার করে দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোস্টার মেনে না সঠিকভাবে ওয়ার্ডে রাউন্ডে আসেন না। তারা ব্যস্ত থাকেন ক্লিনিক চিকিৎসায়।একাধিক রোগীর স্বজন জানান, দুপুরের পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে আসেন না। এই প্রতিবেদক গত সপ্তাহে সরেজমিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতালের আউটডোরেও অনুপস্থিতির প্রমাণ পান।
চক্ষু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. নজরুল ইসলাম, মেডিসিন বিভাগের ডা. তছদিকুর রহমান খান কাফি, জান্নাতুল ফেরদৌস, অর্থাপেডিক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আসাদুর রহমান, নাক কান গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন, ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসুদ জামানকে দুপুর সাড়ে ১২টার পর স্ব স্ব চেম্বারে অনুপস্থিতি দেখা যায়।
জুনিয়র চিকিৎসক বা সহকারীরা কেউ সেমিনারে কেউ বা মিটিংয়ে গেছেন বলে তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি এই প্রতিবেদকের কাছে জানান। শিশু বিভাগে দুপুর ১ টায় রীতিমতো ঝাড়ুদার নাফিসাকে রুম পরিষ্কার করতে দেখা যায়। অথচ আউটডোর চেম্বারে এসব চিকিৎসকদের দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ডিউটি পালনের কথা। আউটডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. কল্লোল কুমার সাহা বলেন, সবসময় যে সব ডাক্তার থাকেন না, এটা ঠিক। রোগী না থাকলে অনেক সময় একটু আগেই কেউ না কেউ চলে যান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কল পেলে রোগী দেখে যান। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী রাউন্ড দিয়ে থাকেন তারা। এরপরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে।#

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031