টেলিগ্রাম রিপোর্ট : গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুদিন আগে থেকেই রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে আসতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সঙ্গে নিয়ে আসছেন বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ও রান্নার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সমাবেশস্থলে পলিথিন দিয়ে তাঁবু টাঙিয়ে বিশ্রাম এবং ডিম-সবজি ও ভাত রান্না করে আহারের মধ্য দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন তারা। তবে এ কর্মসূচি ঘিরে অশুভ তৎপরতা চালালে রাজপথে সমুচিত জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ হুঁশিয়ারি দেন।
গণসমাবেশে আসতে বেশ বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে আবারও অভিযোগ করেছে বিএনপি। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গণসমাবেশের মাদরাসা মাঠ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চ শাহ মখদুম ঈদগাহ রোড ও ফায়ার সার্ভিস মোড়ে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিএনপির নারী সদস্যরাও ছিলেন। বুধবার রাত ১০টার দিকে সমাবেশস্থলে আসেন বগুড়া জেলা মহিলা দলের সহঃ সাধারণ সম্পাদক মোছা. মুক্তা। তিনি বলেন, বুধবার বিকেলে আমরা বাসযোগে রওনা হয়ে পৌঁছেছি রাতে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকিংয়ের কথা বলে পুলিশ আমাদের গাড়ি আটকিয়েছে।
উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপে আবারও কিছু দূর আসি, আবারও আটকিয়েছে, ছেড়েছে, এভাবে এসেছি।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে মাদরাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে বিশ্রাম করছেন অনেকে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচেই শুয়ে রয়েছেন। বাকিরা খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। মাঠের মধ্যেই চুলা তৈরি করে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন। বস্তায় চাল, ডাল, বিভিন্ন শাকসবজি, ডিম ও জ্বালানি নিয়ে এসেছেন তারা। বগুড়ার গাবতলি থেকে হাড়ি, চালের বস্তা, ডিম ও সবজি নিয়ে এসেছেন পৌর বিএনপি নেতা আল ইমরান বাবু। তিনি বলেন, গাড়ি বন্ধের জন্য দুদিন আগেই প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গণসমাবেশে এসেছি। মাঠেই রান্না করে খাচ্ছি আর থাকছি। তবে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের জায়গা তৈরি করে দিচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহঃ সম্পাদক ও মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। তিনি জানান, পথেপথে বাধা অতিক্রম করতে আসতে হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। পুলিশ তাদের কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না। তবে যেকোনোভাবে সমাবেশ সফল হবেই। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত আরএমপির গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। সংবাদ সম্মেলনে দলটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, শনিবারের সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। যখনই বাংলাদেশে নির্বাচন এগিয়ে আসে, ঠিক তখনই বিএনপি নামক সংগঠনটি সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। উদ্বেগ প্রকাশ করে রাসিক মেয়র বলেন, বিএনপি এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডগুলোতে কর্মী সভার নামে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য তথ্য উপস্থাপনসহ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশোভন বক্তব্য প্রদান করে রাজশাহীর শান্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। এভাবে হীন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তারা। তিনি দাবি করেন, বিএনপি ইতিপূর্বে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করেছিলো। সেই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। সেটি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা এখনো বিচারধীন। সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :