টেলিগ্রাম রিপোর্ট : শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে জন্ম চাঁদ বাবুর। হাত-পা থেকেও নেই। জন্ম থেকেই হাতের কব্জি দুটো বাঁকা। পা দু’টো যেন অচল। ছোটবেলা থেকে হাটু গেড়ে আর দুই হাতের উপর ভর করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি তার সামনে।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে চাঁদ বাবু। তিনি পাবনার উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চান চাঁদ বাবু। ভেড়ামেরা উদয়ন একাডেমী থেকে এসএসসি ভোকেশনাল শাখায় কম্পিউটার ট্রেডে পরীক্ষীয় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
শারীরিক বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে জন্মায় চাঁদ। কিন্তু নিরক্ষর ও হতদরিদ্র পিতা-মাতা প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করেনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চাঁদের হাতের কব্জি ও পা বাঁকা হতে দেখে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দেখান পিতা আব্দুর সবুর। সেখানকার চিকিৎসক ওই হাসপাতালে চাঁদের চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানান। পরে চাঁদকে পাবনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে টাকার যোগান না দিতে পারায় চাঁদের আর চিকিৎসা হয়নি। এতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের সমস্যা আরো বাড়তে থাকে।
আলাপকালে চাঁদ বাবু বলেন, ‘দুই হাটু ও হাতে চলাফেরা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি হত। কিছুদিন বিশ্রাম থেকে আবারও স্কুলে গিয়েছি। পরে ভ্যান পেয়ে কষ্ট দূর হয়। আমি ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চাই। কিন্তু আমাকে পড়াশুনা করানোর আর্থিক সক্ষমতা পরিবারের নেই। এখন কেউ সহযোগিতা করলে তবেই আমার পড়াশোনা সম্ভব। তাই আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমীর প্রধান শিক্ষক হেদায়েতুল হক বলেন, চাঁদ বাবু মেধাবী। তবে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই বিদ্যালয় থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। পরবর্তীতেও তাকে সহযোগিতা দিতে পারলে সে আরো ভালো ফলাফল করতে পারবে আশা করি।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চাঁদের এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত। বুধবার তাকে ডেকে এনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টি মুখ করিয়েছি। সেইসাথে কিছু নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তার উচ্চ শিক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান ইউএনও।
আপনার মতামত লিখুন :