টেলিগ্রাম রিপোর্ট : বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে বলছেন ১৪ দলের নেতারা। পাশাপাশি এই সংকটে বিদ্যমান আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন জোট নেতারা।
কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর নিষেজ্ঞা আরোপের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আগামীতে এটা আরও প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে এবং এই সংকট আরও বড় আকার ধারণের আশঙ্কা করছে সরকার।
বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে আগামীতে বাংলাদেশে যে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার পেছনে লুটপাট এবং বিদেশে টাকা পাচারের প্রভাবও রয়েছে বলে মনে করছেন ১৪ দলের নেতাদের অনেকেই।
তাদের অভিযোগ, লুটপাট এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। যার ফলে দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পাচার বন্ধ এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
১৪ দলের নেতারা বলেন, বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের বৈদেশিক আয়ের বড় উৎস গার্মেন্টস পণ্য রফতানি এবং প্রবাসী শ্রমিকদের আয়। বিদেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের এবং দেশীয় শ্রমিকদের বড় বাজার রয়েছে। এই বাজার ঠিক রাখার জন্য এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়, তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
চলমান সংকট আগামীতে যাতে প্রকট না হয়, তার জন্য সরকার ইতোমধ্যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা কার্যকরী বলেই মনে করছেন এ জোটের অনেকে। এই পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে সংকট প্রকট হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
পাশাপাশি দেশের জনগণকে এগিয়ে আসা এবং অপচয় রোধ করার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন ১৪ দলের নেতারা।
সেইসঙ্গে এই সংকটের মুহূর্তে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলা জরুরী বলে মনে করেন তারা। সংকট কাটিয়ে উঠতে সব ধরণের দল-মতকে একত্রিত করে একটি ঐকমত্য গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে কার্যকর বলা যায়। এগুলো বাস্তবায়নের ওপর নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ডলারের সংকট থাকবে না। আমাদের তো এদের কথার ওপরই নির্ভর করতে হয়। তবে জনসাধরণকেও এগিয়ে আসতে হবে, অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে এই সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে না গিয়ে এই মুহূর্তে দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্য তৈরি করা দরকার।
কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি এবং শ্রমবাজার ঠিক রাখতে হবে। আমাদের আয়ের বিরাট উৎস গার্মেন্টস সেক্টর এবং বৈদেশিক শ্রমবাজার। এখান থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, সেটা যাতে ঠিক থাকে অর্থাৎ গার্মেন্টস পণ্য রফতানি ও প্রবাসী শ্রমিকদের যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর লুটপাট, ঋণখেলাপী, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি, লুটপাট করে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে না পারলে সংকট আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, বৈশ্বিক এই সংকট শতভাগ সমাধান করা যাবে না। তবে আমাদের কৃষিক্ষেত্রে শতভাগ যতœবান হতে হবে। শুধু প্রধানমন্ত্রী বললে হবে না, সংশ্লিষ্টদের শতভাগ তৎপর হতে হবে। সব ধরণের সহযোগিতা দিতে হবে। কৃষি পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে, আমাদের এ জায়গাটা দুর্বল। বিপুল টাকা লুটপাট হয়েছে, সেটা পাচার হয়ে গেছে, করেছে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লুটপাটকারী, ঋণখেলাপীরা দেশে বিনিয়োগ করে না, টাকা বিদেশে পাচার করে। এই লুটপাট বন্ধ করতে পাচারকারী, ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হবে, তাহলে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে থাকতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :