টেলিগ্রাম রিপোর্ট : যার ব্যথা সেই বোঝে। অন্যরা কিন্তু সেভাবে বোঝে না। জাতীয় সংসদে নারী আছে, পুরুষ আছে, আমরা কই? কাজেই আমাদের একজন দরকার।
এমন করেই নিজেদের আক্ষেপের কথাগুলো তুলে ধরলেন ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়ের উন্নয়ন সংগঠন সুস্থ জীবন-এর চেয়ারম্যান পার্বতী আহমেদ। নির্বাচন ভবনে বুধবার (৩০ নভেম্বর) তারা দেখা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে।
পার্বতী আহমেদ বলেন, স্যাররা আমাদের বলেছেন কী করা যায় আমরা দেখবো। এছাড়া দলগুলোর সঙ্গে এই ধরনের বৈঠক করতে বলেছেন। সংবিধান কী বলে এই রকম দিকগুলোই তারা দেখবেন।
আমাদের দাবি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন পূর্ণ হবে সকলের অংশগ্রহণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড’, কাউকে বাদ দিয়ে নয়। তাহলে জাতীয় সংসদে নারী আছে পুরুষ আছে আমরা কই? আমাদের একজন দরকার, আমাদের দাবি-দাওয়া এবং আমাদের নিয়ে কাজ করার জন্য। অন্যরা কিন্তু সেভাবে বোঝে না।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এখন অনেকেই শিক্ষিত আছে। একজন চেয়ারম্যান হলেন বিপুল ভোটে, নির্বাচন করে। আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হলে অবশ্যই আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারব। সমাজে হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে যে নেতিবাচক মনোভাব আছে তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের যদি সুযোগ দেওয়া হয় অবশ্যই আমরা কাজ করে প্রমাণ দেখাব। সমাজের মূল ধারায় চলে আসব।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সংশোধন করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার কথাও সিইসির কাছে তারা তুলে ধরেন। পার্বতী আহমেদ বলেন, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সংশোধন নিয়েও কথা বলেছি। আমাদের অনেকেরই পুরুষ আইডি কার্ড আছে। এখন সেটা নিয়ে কোথাও গেলে সেটা একসেপ্ট করে না। কারণ আইডি কার্ড একরকম, আর তাদের দেখতে আরেক রকম। এতে অনেক বৈষ্যমের শিকার হয়েছি। চাকরির ক্ষেত্রে নিতে চায় না। সিভিল সার্জন অফিস ও ঢাকা মেডিকেলে আমাদের কাপড় খুলে দেখেছে। সেখানে আমাদের মানসিকভাবে ও আত্মসম্মানে খুব আঘাত লেগেছে। এছাড়া সেখানে অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। এখন অভিভাবকরা তো আমাদের আরো ১০-১৫ বছর আগেই ছেড়েই দিয়েছে। পরিবার তো আমাদের রাখে না। তো কীভাবে অভিভাবক আনবো?
পাশপাশি আমাদের অ্যাফিডেভিট করতে হয় প্রথম শ্রেণির হাকিম দিয়ে। তিনি আবার থানায় পাঠান। এজন্য অনেক হয়রানি হতে হয়। স্যাররা বলেছেন এসব বিষয় তারা দেখবেন।
এ সময় তার সঙ্গে সুস্থ জীবনের সাধারণ ববি হিজড়া ও কমিউনিটি লিয়াজো অফিসার জোনাকী জোনাক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে তারা সিইসির কাছে একটি স্মারকলিপিও দেন। এতে বলা হয়েছে-সুস্থ জীবন একটি বেসরকারি কমিউনিটি ভিত্তিক সংস্থা, যা ২০০৫ সালে সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সুস্থ জীবন হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জীবনমান উন্নয়ন মানবাধিকার ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হিজড়া/ট্রান্সজেন্ডারদের কাজের ফলাফল সমূহ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখছে।
আপনার মতামত লিখুন :