কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহবান জানিয়ে বলেছেন, আমি বিএনপিকে আবারও বলতে চাই আসুন পরবর্তি নির্বাচনে। ফখরুল গতকাল (বুধবার) বলেছে সরকারকে নিরাপদ প্রস্থান নিতে। আমি বলতে চাই নিরাপদ প্রস্থানের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনেই প্রমান হবে কারা বিজয়ী হবে আর কাদের পতন হবে। সরকার পতনের হাকডাক দিয়ে কোন লাভ নেই। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেছেন, খেলা হবে। অপেক্ষা করুন নির্বাচনে খেলা হবে। ডিসেম্বরে খেলা হবে। বিএনপির আগুন আর লাঠির বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগুন আর লাঠি নিয়ে এলে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।
ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল এখন নাটক শুর করছে। নাটক কি? কোথাও সমাবেশ দিলে ৭ দিন আগে থেকে প্রচার করে, মিথ্যাচার করে, বাঁধা দেয়া হচ্ছে। সরকার বাঁধা দিচ্ছে। আর কাঁথা বালিশ হাড়ি পাতিল তারপরে চালের বস্তা সঙ্গে টাকার বস্তা আর মশার কয়েল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসে। কুমিল্লাতে তো কেউ বাঁধা দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু উনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বচ্ছন্দবোধ করছেন না। ফখরুলের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। এরই নাম ফখরুল। ফখরুল সাহেব-অনুমতি দেয়া হয়েছে। আপনাদের মিটিংয়ে কেউ বাঁধা দেবে না। আমরা রাহশাহীতেও বলে দিয়েছি সেখানে যেন পরিবহন ধর্মঘট না করে। ঢাকাও পরিবহন ধর্মঘট হবে না নেত্রী বলে দিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পরেও যদি বাড়াবাড়ি করেন, লাফালাফি করেন, আগুন নিয়ে নামেন, লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মাঠে নামেন তাহলে খবর আছে। খেলা হবে দারুণ। পাল্টাপাল্টি আমরা করবো না। আমরা শান্তি চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে অশান্তি কেন আমরা করবো। মানুষকে কেন আতংকে রাখবো। আমরা তো মানুষকে শান্তিতে রাখতে চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি অশান্তি হলে তো সেখানে মাথা ঘামাতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বের কি অবস্থা। যুদ্ধের জন্য নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা আজকে একটু বিপদে আছি। মানুষ কষ্টে আছে। অভাবী মানুষ সাধারন মানুষ স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। এটা শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেন। চেষ্টা করছেন তিনি। এখানো বাংলাদেশে সোমালিয়া সুদানের মতো দুর্ভিক্ষ হয়নি। এখনো আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভাল আছি। শেখ হাসিনা ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভাল থাকবে।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন, তারেক লন্ডনে বসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই তারেকের হাওয়া ভবনের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সারা বাংলাদেশ থেকে কত টাকা পাচার করা হয়েছে শেখ হাসিনা তা খতিয়ে দেখছেন। সব টাকা উদ্ধার করা হবে। টাকা পাচারকারী তারেক রহমানসহ যারাই আছে প্রত্যেকের টাকা উদ্ধার করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রসংশা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো এতো সৎ মানুষ ৭৫ এর পর আর আসেনি। এতো সাহসি রাজনীতিবীদ আর একজনও আসেনি। এই বাংলায় তার মতো ত্যাগী, বিচক্ষণ, দক্ষ প্রশাসক আর একজনও আসেনি। আমাদের নেত্রীকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। যতো দিন আছে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি বলেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। এ দলের সৃষ্টি হলো ক্যান্টনমেন্টে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সংবিধানকে হত্যা করেছে। জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে হত্যার রাজনীতি শুরু করেছিলো। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। বেশী পাগলামী করলে পাবনায় পাগলাগারদে অথবা পাকিস্তানী করাচিতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। শেখ সেলিম আরো বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ঐক্যবদ্ধ। তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন শক্তিই আওয়ামী লীগ পরাজিত করতে পারবে না।
সম্মেলনে অন্যান্যে মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, এস.এম কামাল হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, নারী আসন-২৫ এর এমপি নার্গিস রহমান বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানকে সভাপতি ও জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি জিএম সাহাব উদ্দিন আজমকে সাধারন সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি, কাজী রিয়াকত আলী লেকুকে সভাপতি ও আবু সিদ্দিক সিকদার সাধারন সম্পাদক করে সদর উপজেলা কমিটি এবং গোলম কবিরকে সভাপতি ও আলীমুজ্জামান বিটুকে সাধারন সম্পাদক করে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন।
এর আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
সকাল থেকে নেতা কর্মী সমর্থক ও বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা মিছিল সহকারে সভা স্থলে আসেন। সম্মেলন শুরু আগেই সম্মেলন স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনস্রোত বঙ্গবন্ধু সড়ক ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যানার আর ফেষ্টুনে যায় পুরো গোপালগঞ্জ শহর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা জুড়ে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আপনার মতামত লিখুন :