টেলিগ্রাম রিপোর্ট : একেই বুঝি বলে ফিরে আসা! যেভাবে আজ বিশ্বকাপে স্পেনের বিপক্ষে ফিরেছে জাপান। যে ফেরায় তারা লিখেছে প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য এক গল্পও। স্পেনের বিপক্ষে ১–০ গোলে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি ব্লু সামুরাইরা। প্রথমার্ধে রক্ষণে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলটি দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে ২–১ গোলে। যে জয় নকআউট পর্বের পাশাপাশি নিশ্চিত করেছে জাপানের শীর্ষ স্থানও। অন্য দিকে জাপানের কাছে হেরেও শেষ ষোলো উঠেছে স্পেন। তবে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নদের।
প্রথমার্ধের গল্পটা অবশ্য অন্যরকমই ছিল। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই চিরচেনা রূপে স্পেন। বলের দখল নিজেদের কাছে গোলমুখ উন্মোচনের চেষ্টা করে তারা। বিপরীতে জাপানের পরিকল্পনা ছিল ৫ জনকে নিচে রেখে প্রতি-আক্রমণ থেকে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা।
তবে জাপানের এই কৌশল মুখ থুবড়ে পড়ে ম্যাচের ১১ মিনিটেই। দারুণ এক আক্রমণে গোল করে এগিয়ে যায় স্পেন। সেজার এজপিলিকুয়েতার মাপা ক্রসে হেড দিয়ে লা ফুরিয়া রোহাদের এগিয়ে দেন আলভারো মোরাতা।
এগিয়ে যাওয়ার পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছেই রাখে স্পেন। জাপান বলের দখল নিলেও স্পেনের কাউন্টার প্রেসিংয়ে বল বেশি সময় কাছে রাখতে পারছিল না তারা। এশিয়ান দলটি অবশ্য পিছিয়ে পড়েও ডিফেন্স ছেড়ে আসার সাহস দেখাতে পারছিল না।
প্রতি আক্রমণে হুটহাট উইং ধরে ওঠার চেষ্টা করলেও সেসব প্রচেষ্টা অ্যাটাকিং থার্ডে পৌঁছানোর অনেক আগেই থামিয়ে দিচ্ছিল স্প্যানিশ ডিফেন্ডাররা। ২২ মিনিটে স্পেনের আরেকটি আক্রমণ জাপানকে হুমকিতে ফেললেও তাতে ফল মেলেনি।
স্পেনের দুর্দান্ত পজিশনিং এবং মাঝ মাঠে পাসের পশরায় রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠছিল জাপানের। বলের খোঁজে স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন শুধু। যদিও তাতে লাভ কিছুই হচ্ছিল না।
এরপর অবশ্য ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে জাপান। দারুণ একটি আক্রমণও তৈরি করেছিল। তবে স্প্যানিশ ডিফেন্সে গিয়ে ব্যর্থ হয় সেই প্রচেষ্টা। তবে প্রথমার্ধে জাপানের প্রচেষ্টা বলতে এটুকুই, যেখানে একটি অফ টার্গেট শট ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এরপর আবারও সেই স্প্যানিশ দাপটের গল্প। হতাশা নিয়েই বিরতিতে যায় জাপান।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্পেন থিতু হওয়ার চমকে দেয় জাপান। কৌশল বদলে স্পেনকে পাল্টা চাপে ফেলার চেষ্টা করে তারা। যার ফল আসে ৪৮ মিনিটে। স্প্যানিশ ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে বুলেট গতির শট নেন রিতসু দোয়ান। বলে হাত লাগিয়েও সেটিকে বাইরে পাঠাতে পারেননি উনাই সিমন। বলের গতি পরাস্ত হন স্প্যানিশ গোলরক্ষক।
তবে নাটক জমে ওঠে ম্যাচের ৫১ মিনিটে। দারুণ এক আক্রমণে স্প্যানিশ ডিফেন্সে ঢুকে বল পাস দেন দোয়ান। সেই বল কাট ব্যাক করে আও তানাকার কাছে পাঠান কারোরু মিতোমা। নিঁখুত ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তানাকা। তবে মিতোমা বল কাটব্যাক করার আগে বল গোল লাইন পেরিয়েছে কিনা এমন সন্দেহ হওয়ায় ভিএআরের সাহায্য নেন রেফারি। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত জাপানের পক্ষে যায় এবং ম্যাচে লিড নেয় জাপান।
পরপর দুই গোল হজম করে চাপে পড়ে যায় স্পেন। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও হারায় তারা। এ সময় আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে স্প্যানিশ ডিফেন্সের পরীক্ষা নিতে শুরু করে এশিয়ান দলটি।
ফল বদলাতে একাধিক পরিবর্তন আনেন লুইস এনরিকে। তবে কাজের কাজটা হচ্ছিল না কিছুতেই। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি স্পেন। অন্য দিকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল জাপানও। তবে তারাও আর গোল পায়নি। যদিও তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। জাপান পেয়েছে ঐতিহাসিক এক জয়।
আপনার মতামত লিখুন :