৪ লাখ টাকা আদায় করতে জ্বীনের বাদশাকে ১২ লাখ টাকা দিয়ে সর্বশান্ত যশোরের আবুল হোসেন
টেলিগ্রাম রিপোর্ট
প্রকাশের সময় : জুন ২৭, ২০২৩, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ /
২৭২২০
যশোর প্রতিনিধি : যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের কাঠব্যবসায়ী আবুল হোসেন (৬৫)। ব্যবসায়ীক সুবাদে বিভিন্ন পাওনাদারের কাছে চার লাখ টাকা পাওনা হয়ে যায়। পাওনা টাকা পরিশোধ করার নামে একের পর এক কালক্ষেপণ করতে থাকে পাওনাদারেরা। হঠাৎ ছয় মাস আগে টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পান ‘জ্বীনের মাধ্যমে পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব’ এমন একটি বিজ্ঞাপন। টেলিভিশনের পর্দার মোবাইল নম্বরে কল করলে অপর পাশ থেকে কথিত জ্বীনের বদশা জানায় তিনি জ্বীনের মাধ্যমে আবুল হোসেনের সকল পাওনা টাকা আদায় করে দিবেন। একই সাথে আরো ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখায় কথিত প্রতারক চক্রের ওই জ্বীনের বাদশা।
আবুল হোসেনকে বলা হয়, তার বাড়ির রাস্তায় ২১ টি কলসে ওই টাকা লুকানো আছে যা জ্বীন তাকে পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করবে। এমন প্রলোভনে পড়ে জ্বীনের বদশার মরণ ফাঁদে পা দেন আবুল হোসেন। তাকে এটাও বলা হয় ‘এই বিষয়টি কাউকে জানালে তিনি আর টাকা উদ্ধার করতে পারবেন না। কেউ জানতে পারলে তার মালেয়শিয়া প্রবাসী ছেলে মারা যাবে। আর ওই ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকাও পাওয়া যাবে না। ফলে তিনি ‘জ্বীনের বাদশার’ কথা মতো কাজ করতে থাকেন। কয়েরকদিন কথা বলার পর জ্বীনের বাদশা তাকে প্রস্তাব দেয় ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা পেতে হলে তাকে ১২ লাখ টাকা বিকাশে পাঠাতে হবে। এমন সময় আবুল হোসেন সরল বিশ্বাসে লেবুতলা বাজারের দুইটি বিকাশ নম্বর থেকে কয়েক দফায় ১২ লাখ টাকা পাঠান। পরবর্তীতে তিনি জ্বীনের বদশার ওই দুইটি ফোন নাম্বার বন্ধ পান।
ভুক্তোভোগী আবুল হোসেন বলেন, আমি যখন ওই কথিত জ্বীনের বাদশার সাথে যোগাযোগ করি। এরপর থেকে সে আমাকে বিভিন্ন কথার ছলে বলে আমার মগজ ধোলাই করে। একে একে তার কথা মতো আমি ধার-দেনা, সুধে টাকা নিয়ে, জমি বিক্রি করে, ব্যাংক ঋন নিয়ে ১২ লাখ টাকা পাঠিয়েছি। আমি সরল সোজা মানুষ, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখে এ প্রতারক চক্রের ফাদে পা দিয়ে এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। আমি মামলা করেছি, আমার এ টাকা উদ্ধার না হলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
আবুল হোসেন আরও বলেন, আমি মানুষের কাছ থেকে দার দেনা করে টাকা নিয়েছি। এখন দেনাদাররা আমার বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, আমার নামে মামলা করতে যাচ্ছে। আমার ঘরে চাল কেনার পয়সাও নাই এই মুহুর্তে। প্রশাসনের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমার টাকাগুলো যেন উদ্ধার করে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পেটের দায়ে আমার অসুস্থ স্ত্রী বাসাবাড়িতে কাজ করছে। ছেলে বিদেশে থাকে তবে এখনো বাড়িতে খরচ পাঠাতে পারে না।
এ ব্যপারে যশোর সিআইডি পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক কাজী বাবুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী আবুল হোসেম মামলা করেছেন, আমাদের সিআইডি পুলিশেও অভিযোগ দিয়েছেন। আমাদের কাছে মামলার কপি পৌছালেই আমরা প্রতারক চক্রকে আটক করবো।’
আপনার মতামত লিখুন :