শামীম খান,মাগুরা : পরিবারে অর্থের যোগান দিতে অন্যের জমিতে কামলা খেটেও এবারের এস এস সিতে জিপিএ-৫ পেয়ে দারিদ্রের কাছে শিক্ষার হার না মানার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছে অভিক সরকার। তার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামে।
সে মাগুরার শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগের ড্রেস মেকিং শাখায় এ সাফল্যের অধিকারী হয়েছে।
মোবরকপুরের একটি দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা অভিকের। বাবা অসিম সরকার একজন হতদরিদ্র কৃষক। নিজের কৃষি জমির পরিমান মাত্র ২০ শতক। সেখানে যে ফসল হয় তা দিয়ে সারা বছরের জন্য সীমিত অন্নের সংস্থান হয়। এ কারণে অন্যের জমিতে দিনমজুরী করেন অসিম সরকার। অষ্টম শ্রেণী থেকে ছেলে অভিক সরকার স্কুল ছুটির দিনগুলোতে বাবার সাথে একইভাবে অন্যের জমিতে কামলা পরিবারে সহযোগিতা করেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে অভিক সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা স্বপ্না রানী সরকার একজন গৃহিনী।
অভিকদের বাড়িঘর বলতে সামান্য জমির ওপর একটি টীনসেড ঘর। চারপাশে বাঁশ ও কাঠ খড়ির বেড়া। সেখানেই ঝড় বৃস্টি মোকাবেলা ক’রে টিকে থাকা তাদের। বিদ্যুত না থাকায় এস এস সি পর্যন্ত সন্ধ্যা পরবর্তি লেখাপড়া চলেছে কেরোসিন কুপি জ্বালিয়ে। দু’মাস হলো বাড়িতে বিদ্যুত এসেছে। সেই সাথে গোটা বাড়ি আলো ক’রে এসেছে অভিকের এস এস সি’র সাফল্যের খবর।
অভিক সরকারের মা স্বপ্না রানী সরকার বলেন, বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। কেরোসিনের কুপি জালিয়ে রাত জেগে পড়াশুনা করেছে অভিক। সে সব সময় ভাল ফল করবে বলে জানাতো। কিন্তু এতো ভাল ফল করবে আমরা কখনো ভাবিনি। আমার ছেলেকে কোনদিন ভালো একটা জামা কাপড় কিনে দিতে পারিনি। ভালো খাবারতো দুরের কথা। তবে সে ধরনের কোন আবদার অভিক কোনদিন করেনি। বরং অন্যের জমিতে দিন মজুরী ক’রে আমাদের টাকার যোগান দিয়েছে।
অভিকের বাবা অসিম সরকার বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি অভিক আমার সাথে মাঠে কাজ করেছে। সারা দিন পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় ঠিকই পড়তে বসেছে। তাকে কখনো পড়ার কথা বলা লাগেনি। টাকার অভাবে তাকে কখনো প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে পড়াতে পারিনি। স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠিদের সহযোগিতায় সে নিয়মিত লেখাপড়া করে এতো ভাল ফল করেছে।
অভিক সরকার জানায়, ছেলে বেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল এসএসসিতে ভাল ফল করে বাবা মাকে খুশি করবে। কারণ ছেলেবেলা থেকেই সে তাদের দারিদ্রের সংসারে বাবা মা’র নিদারুন কষ্ট করা দেখে আসছে। জিপিএ-৫ পেয়ে সে নিজে যেমন খুশি। তেমনি বাবা মা সমান ভাবে খুশি হয়েছেন। এটাই তার বড় পাওয়া। একইভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করে সে পরবর্তী পর্যায়ে একজন টেক্সটাইল প্রকৌশলী হতে চাই। তবে আগামী দিনের লেখা পড়ায় তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অর্থের যোগান দেয়া কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা হয় তার। প্রতিদিন গ’েড় সে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা লেখা পড়া করেছে সে। ক্লাসে স্কুলের শিক্ষকদের পড়ায় মনোযোগী হলে আর সেগুলো বাড়ি ঠিকঠাক করলে যে কেউ এমন ভালো ফল করতে পারে বলে অভিকের অভিমত।
অভিকের মামা সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, অভিক অত্যন্ত পরিশ্রমী ও ভালো মানসিকতার ছেলে। লেখাপড়ায় কোনদিন অবহেলা করে নি। অন্যের জমিতে কাজ করাটাকে ছোট ক’রে দেখে নি। বরং এখনো চার’শ টাকা দৈনিক মজুরীতে সে কামলা খাটছে। এমনকি ফল প্রকাশের দিন সে মাঠে কাজ করছিল। দিনের বেলা সময় কম পেত বলে সে রাত জেগে লেখা পড়া করেছে। সে আমাদের এলাকার গর্ব।
আপনার মতামত লিখুন :