এম এম আব্দুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে চলছে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা। মেলায় মা-বাবার সাথে সন্তানদের পাশাপাশি উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদের ভীড় সবচেয়ে বেশী। এসব উঠতি যুবদের আকৃষ্ট করতে মধুমেলায় যাদু প্রদর্শণীর প্যান্ডেলে চলছে অশ্লীল নৃত্য। প্যান্ডেল মালিকরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা করছে না।
মধুকবির ১৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। মেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় মধুমঞ্চে মধুসূদনের জীবন ও সাহিত্যের ওপর আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও দর্শকদের বিনোদনে উন্মুক্ত মঞ্চে নাটক, যাত্রপালা, সার্কাস, কৃষি প্রযুক্তি মেলা, মৃত্যুকূপ, ডিজিটাল যাদু প্রদর্শণী, শিশুদের বিনোদনে নাগরদোলা, ট্রেন, কপোতাক্ষ নদে নৌকায় চড়াসহ হরেক রকমের আয়োজন রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত ২ বছর মধুমেলা উদযাপণ না হওয়ায় এবছর মেলার শুরুতেই লাখ লাখ মধুপ্রেমী ভক্তের সমাগম ঘটে সাগরদাঁড়িতে। মধুমেলার আইন শৃঙ্খলা উপকমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মধুমেলা উদযাপণ কমিটির সদস্য সচিব এমএম আরাফাত হোসেন বলেছিলেন, মেলা মেলার মতই হবে। কোন অশ্লীলতা সহ্য করা হবে না। যাদু প্রদর্শণীর প্রতিটি প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরাসহ টোটাল মধুমেলার মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যাদুর প্যান্ডেলে শুধুমাত্র যাদু প্রদর্শণী ছাড়া অন্য কোন কিছু করা যাবে না।
এদিকে, গেল বছলগুলোতে মধুমঞ্চের অনুষ্ঠান চলাকালিন সার্কাস, মৃত্যুকূপ, ডিজিটাল যাদু প্রদর্শণী বন্ধ থাকতো। এতে মধুমঞ্চের অনুষ্ঠানে ভক্তদের উপচে পড়া ভীড় থাকতো। কিন্তু এবছর সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ। লাখ লাখ মধুপ্রেমীর আগমনকে টার্গেট করে বিকেল থেকে শুরু হচ্ছে সার্কাস, মৃত্যুকূপ ও ৬ টি ডিজিটাল যাদু প্রদর্শণীর প্যান্ডেলে চলছে যাদুর নামে অশ্লীল নৃত্য। মধুমেলার ২য দিনেই অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের দায়ে প্যান্ডেল মালিক গোপসেনা গ্রামের আবু দাউদের ডিজিটাল যাদু প্রদর্শণীর প্যান্ডেল বন্ধসহ তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনার পরের দিন থেকে প্যান্ডেল মালিক আবু দাউদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আবারও শুরু করে যাদুর নামে অশ্লীল নৃত্য। শুধু ওই প্যান্ডেলে নয়, সব প্যান্ডেলেই চলছে অশ্লীল নৃত্য। ২৭ জানুয়ারি সার্কাসের প্যান্ডেলে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করায় তাদেরও প্রশাসন ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। ডিজিটাল যাদু প্রদর্শণীর প্যান্ডেলগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও প্যান্ডেল মালিকদের ডিজিটাল লাইটিংয়ের কারণে সিসি ক্যামেরা ভোতা হয়ে গেছে বলে সচেতন মধুপ্রেমীদের অভিযোগ।
সরেজমিনে গত শনিবার রাত ৮টায় বিভিন্ন যাদু প্রদর্শণীর প্যান্ডেলে গিয়ে দেখা যায়, যাদু পরিবেশনের পরিবর্তে ওইসব প্যান্ডেলগুলোতে চলছে অশ্লীল নৃত্য। দর্শক আকৃষ্ট করতে এসব প্যান্ডেল মালিকরা ঢাকা থেকে মোটা অংকের টাকায় খুশি নামের এক চিত্র নায়িকা, কেউ বা মিশা শওদাগর, ডন, চিকন আলীসহ নামীদামী চিত্র জগতের শিল্পীদের ভাড়া করে এনেছেন। এতে টিকিটের মূল্য হাকা হয়েছে চেয়ার-১০০ টাকা ও বাংলার জমিন ৫০ টাকা করে। এতে উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীরা সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মধুমেলার মূল আকর্ষণ মধুমঞ্চের অনুষ্ঠান দর্শক শূন্য হবে ধ্বংস হবে দেশের যুব সমাজ।
এ ব্যাপারে মধুমেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান জানান, আপনারা যে অশ্লীল নৃত্যের কথা বলছেন তা আমি বিশ্বাস করি। এ মেলা আপনাদের। এর ভালো মন্দ সব দেখভাল করার দায়িত্বও আপনাদের। আমাকে কাজ করার সুযোগ দেন। সবই বন্ধ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :