ঢাকা ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে প্রকাশ্য দিবালোকে মণষা প্রতিমা ভাঙচুর, জিজ্ঞাসাবাদে দুই কিশোর কিশোরী


টেলিগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৮, ২০২৪, ৩:৪০ অপরাহ্ণ / ২৭২২০
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে প্রকাশ্য দিবালোকে মণষা প্রতিমা ভাঙচুর, জিজ্ঞাসাবাদে দুই কিশোর কিশোরী

রঘুনাথ খাঁ,সাতক্ষীরা ঃ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের কদমতলা বাগানবাড়ি বাবা তারকনাথ ধাম মন্দিরের মণষা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এক কিশোর ও এক কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
অটককৃতরা হলো, আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের সাদেক হোসেনের মেয়ে ও তুয়ারডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া খাতুন ও একই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পড়ুয়া নূরে আলম।
কদমতলা বাগানবাড়ি বাবা তারকনাথ ধাম মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ মণ্ডল জানান, প্রতি বছর তাদের বািিড়তে চুরি ও ডাকাতি হওয়ার ফলে কদমতলা গ্রামের সূর্যকান্ত মণ্ডল ও খগেন্দ্রনাথ গাইন আজ থেকে ৩০ বছর আগে ভারতে চলে যান। তাদের ২০ বিঘা জমি কেনেন তুয়ারডাঙা গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুর রহমান। তার পাঁচ ছেলের মধ্যে হোসেন আলী বাড়িতে সাপের উপদ্রপের ঘটনায় এক রাতে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে তাকে তাকে মনষা মন্দির করতে বলা হয়। তখন তিনি তাদের জমির কিছু অংশ মন্দিরের কাজে ব্যবহার করার জন্য স্থানীয় হিন্দুদের অনুমতি দেন। জমির উপস্বত্বাদিও মন্দিরের কাজে ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ওই ২০ বিঘাসহ মোট ৩৫ বিঘা জমিতে থাকা পুকুর গত পাঁচ বছর ধরে লঝি নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন তুয়ারডাঙা গ্রামের কুদ্দুস সরদার। এ ছাড়া নয় বছর আগে তার দানকৃত পাঁচ শতক জমিতে কদমতলা বাগানবাড়ি বাবা তারকনাথ ধামে শিবমন্দির, কালীমন্দির লোকনাথ মন্দির, গঙ্গাদেবী মন্দির, বেহুলা লখিন্দর মন্দির ও মণষা মন্দির নির্মাণ করা হয়। মূল শিবমন্দির থেকে মণষা মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ২০০ গজ। মণষা মন্দিরটির চাল না থাকলেও চারিদিক চটার বেড়া দিয়ে ঘেরা। প্রতি বছর পহেলা চৈত্র থেকে শেষ চৈত্র পর্যন্ত শতাধিক সন্ন্যাসী এ শিবমন্দিরে অবস্থান করে শিবপুজাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করে থাকেন। শুক্রবার রাতে মন্দিরে বেহুলা লখিন্দর যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ন্যাসী খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের পরিতোষ মণ্ডলের ছেলে দেবব্রত মণ্ডল জানান, শনিবার ভোরে বেহুলা লখিন্দর যাত্রাপালা শেষে তিনিসহ শতাধিক সন্ন্যাসী পার্শ্ববর্তী গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়েন। দুপুর ১২টার দিকে এক কিশোর ও এক কিশোরীকে মূল মন্দির থেকে ২০০ গজ দূরে মণষা মন্দিরের প্রতিমা দা দিয়ে ভাঙচুর করতে দেখে সকলকে ডেকে তোলেন। একপর্যায়ে ওই দুই কিশোর কিশোরী দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই বিষয়টি মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ মণ্ডলকে জানানো হয়। তিনি থানায় জানালে পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, উপপরিদর্শক সাব্বির হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী, বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানা,খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম এসে ওই দুই কিশোর কিশোরীকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বড়দল ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায় পুলিশ।
তবে স্থানীয় সন্ন্যাসী ও সাংবাদিকরা জানান, ওই কিশোর ও কিশোরীকে বাড়ি থেকে মণষা মন্দিরের সামনে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় এক সাংবাদিক ভিডিও করতে গেলে তাকে বাধা দেয় পুলিশ।
আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাদিয়া জানায় যে, নূরে আলম পুকুরঘাট থেকে দা সংগ্রহ করে তাকে সাথে নিয়ে মন্দিরে ঢুকে পড়ে। এ সময় নূরে আলম খেলা দেখাচ্ছি বলে, দা দিয়ে প্রতিমা কোপাতে থাকে।
হোসেন আলী ও তার চার ভাইয়ের জমি ইজারা গ্রহীতা কুদ্দুস সরদার জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জমির বেড়া দেওয়ার কাজ করার একপর্যায়ে পুকুরঘাটে দা রেখে তিনি গোসল করতে যান। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন যে, কদমতলা গ্রামের সাদিয়া খাতুন ও নূরে আলম তার দা নিয়ে মনষা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে।
এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এক কিশোর ও এক কিশোরীর বিরুদ্ধে মণষা প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বড়দল ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ি পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।# সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাংÑ ০৬.০৪.২৪ ছবি আছে।

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

সাতক্ষীরা বিভাগের আরো খবর

আরও খবর