ঢাকা ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণ, মারা গেলো গর্ভের সন্তান


টেলিগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ৬:১৫ অপরাহ্ণ / ২৭২২০
স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণ, মারা গেলো গর্ভের সন্তান

পাবনার আমিনপুরে স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এতে তার গর্ভের সন্তানও মারা গেছে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই নানা চাপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন চর কেষ্টপুরের মাজেদ প্রামাণিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক (২৩), একই এলাকার মো. শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মণ্ডলের ছেলে রুহুল মণ্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও মো. শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চর কেষ্টপুরের কাদেরিয়া তরিকার ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী। টাকার প্রয়োজনে ওই রাতে তিনি স্বামীর কাছে যান। সেখানে ওয়াজ শুনে রাত ১২টার দিকে  তারা   স্বামী স্ত্রী পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে গতিরোধ করেন অভিযুক্ত ৬ যুবক। এ সময় তাদের দুজনকে নানা প্রশ্ন করা হয়। একপর্যায়ে স্বামীকে অস্ত্র ও ব্লেডের মাধ্যমে জিম্মি করে এবং ওই নারীকে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের দুই জন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ওই নারীর স্বামী তাদের কাছ থেকে ছুটে এসে স্থানীয় লোকজনকে বললে তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে আটক করে এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় ধর্ষণের শিকার নারীকে স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘আমাদের ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত ১টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বলল, কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এ সময় মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরির কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমরা আমাদের আত্মীয় বাড়িতে যাওয়া পথে তারা মাঠের মধ্যে পথ আটকায়। আমাদের বলে তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী দাবি করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফোনে আমাদের মা-বাবার সঙ্গে কথা বললেও ওরা শোনেনি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং অস্ত্র আর ব্লেডের মুখে তাকে জিম্মি করে আমাকে মাঠের মধ্যে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ শুরু করে। এ সময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে পাশের লোকজন ডেকে আনলে একজনকে আটক করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।’ ভুক্তভোগীর নারীর স্বামী মামলার বাদী বলেন, ‘আমার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এ ঘটনায় তার গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনও কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। থানায় গেলে কিছু পুলিশ সদস্য নানান কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকি ও চাপ আসছে। বলছে, এ ঘটনায় কিছুই হবে না। তোমাদেরই বিপদ হবে তাই মীমাংসা করো। আমরা ধর্ষণ এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরি বলেন, ‘স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিই। পরে তাদের বলি মেয়েটাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’ অভিযুক্তরা এখনও গ্রেফতার না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। এটা নিয়ে প্রশাসনের তেমন তোড়জোড় আছে বলে তেমনটা মনে হচ্ছে না। আমরা এরকম একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’ তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা সবাই পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশি গাফিলতার বিষয়টি মিথ্যা। আমরা চেষ্টা করছি গ্রেফতারের। ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা হয় না। বাদীকে হুমকি-ধমকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031