১০ মাসের বাছুর প্রতিদিন দুধ দিচ্ছে তিন লিটার
টেলিগ্রাম রিপোর্ট
প্রকাশের সময় : মে ১০, ২০২৩, ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ /
২৭২২০
ভূঞাপুর প্রতিনিধি : শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা সত্যি বাচ্চা প্রসব ছাড়াই ১০ মাসের বকনা বাছুর দুধ দিচ্ছে। যেখানে বাছুরটি নিজেই তার মায়ের দুধ খেয়ে বেঁচে আছে। অথচ সেই বাছুরটি আবার প্রতিদিন তিন লিটার করে দুধ দিচ্ছে। একইসঙ্গে বাছুরটি মা প্রতিদিন দুধ দিচ্ছে দেড় লিটার করে। এ নিয়ে আশপাশের এলাকায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে।
আর এমন বিরল ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের চর নলছিয়া গ্রামে। ওই বকনা বাছুরটির মালিকের নাম আব্দুস সালাম মিয়া। তবে বিষয়টি আশ্চার্য মনে হলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন যে গরুর হরমোনজনিত কারণে কম বয়সী গরু প্রসব ছাড়াই দুধ দিতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আব্দুস সালাম মিয়ার স্ত্রী পারভীন বেগম ১০ মাস বয়সের ওই বকনা বাছুরের ওলান থেকে দুধ দোহন করছেন। তিনি বাছুরটি থেকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার করে দুধ সংগ্রহ করছেন। এমন দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত ও আশেপাশের এলাকার উৎসুক প্রিয় মানুষেরা প্রতিদিনই ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।
পারভীন বেগম জানান, হঠাৎ একদিন দেখি ১০ মাস বয়সী বাছুরের ওলান ফুলে গেছে। এ কারণে পশু ডাক্তার ডেকে এনে ৩ দিন বাছুরের চিকিৎসা করি। এরপর দেখি ওলান আরো বেশি ফুলে গেছে। পরে চিকিৎসা করা বাদ দেই। একদিন গরু কেনার জন্য এক পাইকার আসে। সে ওলান ফুলা দেখে টান দিলে দুধ বেরিয়ে আসে। আমি তো পুরোই অবাক হয়ে যাই এবং বাছুরটির দুধ দোহন শুরু করি। বাছুরটি অন্যান্য গাভীর মতোই স্বাভাবিক দুধ দিচ্ছে। এখন প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার দুধ দোহন করছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে আমাদের একটি ছাগল পেট ফেঁপে তিনটি বাচ্চা রেখে মারা যায়। পরে ওই দুধ মা ছাড়া তিনটি ছাগলের বাচ্চাকে খাওয়ালেও তৃপ্তি আসে না বলে নিজেরা প্রাণ করছি না। এমনকি এ দুধ কাউকে দিচ্ছি না এবং বিক্রিও করছি না। এটি আমাদের জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত। গরুটি বিক্রি করতে চাইছিলাম এখন আর বিক্রি করবো না, আমি গরুটি লালনপালন করবো। তিনি আরও বলেন, এর আগে আমরা সাংবাদিক কখনো দেখিনি, এই গরুর উছিলায় সাংবাদিক দেখতেছি এবং তাদের সাথে কথা বলতেছি। এটি আমাদের জন্য খুবই খুশি ও আনন্দের বিষয়।
আব্দুস সালাম বলেন, গত ৭-৮ মাস আগে ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাছুরসহ গাভী কিনে যমুনার চরাঞ্চলে লালন-পালন করছেন। এর কিছুদিন পর ১০ মাস বয়সী ওই বাছুরের ওলান ফুলা দেখা যায়। এরপর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে তাৎক্ষণিক প্রসব ছাড়াই বাছুরের ওলান টান দিলে দুধ বেরিয়ে আসে। পরে ওই বাছুর থেকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার দুধ সংগ্রহ করি। তবে বিষয়টি আশ্চর্যজনক হলেও সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আর এই আশ্চর্য বিষয়টি দেখতে প্রতিদিনই অনেক মানুষ বাড়িতে আসছে। এটি আমাদের জন্য আনন্দের ও উৎসবের মতো।
প্রতিবেশী মজনু তালুকদার জানান, প্রথমে আমি নিজেই বিশ্বাস করি নাই। যখন নিজের চোখে দেখলাম তখন তো আর অবিশ্বাস করা যায় না। বাচ্চা প্রসব ছাড়াই ওই ১০ মাসের বাছুরটি প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার দুধ দিচ্ছে। আমার মতো হয়তো অনেকেই এটি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। তবে ১০ মাসের ওই বাছুরটি যে দুধ দিচ্ছে এটা সত্য।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকুমার চন্দ্র দাস জানান, এমন বিরল ঘটনায় বিস্মিত বা আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, হরমোনজনিত কারণে এমনটা অনেক সময় হয়ে থাকে। এ ঘটনাটি ভিন্ন রকম মনে হলেও ওই দুধ পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত। এ ধরনের ঘটনা দেশে আগেও ঘটেছে। অতএব আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। যে কেউ ওই বাছুরের দুধ পান করতে পারবেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, এসব বকনা বাছুর গরুর দুধ পান করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। এই দুধ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। মূলত অতিমাত্রার হরমোন পরিবর্তনজনিত কারণে বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দুধ দিতে পারে গরু। তবে এ ঘটনা খুবই বিরল তা নয়। এর আগে জেলার সখীপুর উপজেলাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এটি স্বাভাবিক ঘটনা। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
আপনার মতামত লিখুন :