বাঘারপাড়া জনস্বাস্থ্য অফিসের যোগসাজশে নিরাপদ পানি সরবরাহে নলকুপ স্থাপনে ব্যবহৃত হচ্ছে গোবর
টেলিগ্রাম রিপোর্ট
প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ /
২৭২২০
স্টাফ রিপোর্টার,বাঘারপাড়া (যশোর) : যশোরের বাঘারপাড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অধীন নলকুল খননের সময় বোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মেশানো হচ্ছে।
ইতোমধ্যে একশ’র বেশি নলকুপ বোরিং শেষ হয়েছে। অধিদপ্তরের কড়া চিঠি উপেক্ষা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বেন্টোনাইট-ক্লে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে আনা হয় না এমন অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় গোবরমিশ্রিত পানি দিয়েই প্রতিটি নলকূপ বসানোর কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সুত্রে জানা যায়, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ২৩৪ টি নলকুপ বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। প্রতি নলকুপ স্থাপনে গ্রাহককে ১০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে চালান জমা দিতে হয়। সেখানে সরকার ঠিকাদারের মাধ্যমে সরবরাহ করছে ছয়শত ফুট পাইপ , ১ হর্স পাওয়ার পাম্প, ১০০০লিটারের ১টি ট্রাংকি, ২০ কেজি বেন্টোনাইট -ক্লে ও ৫ ফিট হাইটের ১০ ইঞ্চি গাথুনের স্টান্ড। এতে সরকারের ব্যায় হচ্ছে একটি নলকুপ স্থাপনে জন্য ১ লাখ টাকা।
অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ি দরপত্র চুক্তি মোতাবেক নলকুপ খননের সময় অবশ্যই বোরিং ফ্লুইড হিসাবে বেন্টোনাইট -ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে হবে। কোনক্রমেই বোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা যাবে না। নলকুপ স্থাপনের সময় মনিটরিং এর দায়িত্বে নিয়জিত কর্মকর্তা ও মেকানিকগন নলকুপ খননের সময় রোরিং ফ্লুইড হিসাবে বেন্টোনাইট -কে মিশ্রিত পানি ব্যবহার নিশ্চিত করবেন । গোবর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করলে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে বলা হয়েছে নলকুপ স্থাপনের সময় গোবর পানি ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর দূষণের স্থায়ী সমস্যা হতে পারে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল ওহাব এন্টারপ্রাইজ ঢাকা ও মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজ যশোর নামের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নলকুপ স্থাপনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অধিদপ্তরের আদেশ উপেক্ষা করে তাঁরা তাঁদের শ্রমিক দিয়ে নলকুপ খননের সময় বোরিং ফ্লুইড হিসাবে গোবর মিশিয়ে নলকুপ বোরিং শেষ করছেন।
নলকুপ বরাদ্দ পাওয়া এমন একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন , উপজেলা জনস্বাস্থ্যের লোকজন বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করছে। এমনটি বোরিংয়ে বেন্টোনাইট-ক্লে মিশ্রিত করলে নলকুপ নষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঠিকাদারের শ্রমিকরা গোবর ব্যবহার না করতে দিলে বোরিং হবে না এমন ভয়ভিতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।
চাড়াভিটা এলাকার অরুন দে জানান, আমি উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের মাধ্যমে একটা নলকুপ পাই। নলকুপ বসানোর সময় ঠিকাদারের লোকজন গোবর ব্যবহার করছে। গোবর এনে দেয়ার পর তাঁরা নলকুপ বসানোর কাজ শেষ করেছে।
করিমপুর গ্রামের মশিয়ার সর্দার ও আজিজুর বিশ্বাস জানান তাদের নলকুপ বসানোর ক্ষেত্রেও গোবর ব্যবহার করা হয়েছে। এ গোবর তাদেরকে যোগাড় করে দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছে।
এ বিষয় জানতে আব্দুল ওহাব এন্টারপ্রাইজ মালিক শাহাদাত হোসেন ও মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজ মালিক আলমগীর কবির সুমন অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে জানান , বেন্টোনাইট -ক্লে ব্যবহার করে নলকুপ বোরিং করা হচ্ছে। গোবর ব্যবহার হচ্ছে না ।
অভিযোগ রয়েছে বরাদ্দের এ বিপুল পরিমান বেন্টোনাইট-ক্লে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে আনা হয় না। এ বিষয়ে প্রকৌশলী আবু হানিফ জানান, ঠিকাদারকে বেন্টোনাইট-ক্লে’র ”দাম বাদ রেখে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়”। তিনি আরো জানান, অধিদপ্তরের চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নলকুপ বোরিংয়ে গোবর ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে। বেন্টোনাইট-ক্লে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় জানতে যশোর জেলা জনস্বাস্থ্য নিবার্হী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজের মোবাইলে একাধিক ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
আপনার মতামত লিখুন :