ঢাকা ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রংপুরে ১৫ নবদম্পতি বিয়ের সাথে পেলো জীবিকার অর্থ ও উপকরণ


টেলিগ্রাম রিপোর্ট প্রকাশের সময় : মার্চ ৬, ২০২৪, ৬:৫১ অপরাহ্ণ / ২৭২২০
রংপুরে ১৫ নবদম্পতি বিয়ের সাথে পেলো জীবিকার অর্থ ও উপকরণ

নগরীর শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে সাজ-সাজ রব। স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে এক অন্যরকম মিলন মেলার। রাজকীয়ভাবে সাজানো মঞ্চে সারিবদ্ধভাবে করে বিয়ের পাঞ্জাবী, পায়জামা, জুতা, পাগড়ী পড়ে বসে আছে ১৫ জন বর। অপর আরেকটি ঘরের ভেতরে বিয়ের সাজে ১৫ জন কনে।  সকলেরই হাস্যোজ্জ্বল মুখ। এভাবেই বিয়ে হয় ১৫ জোড়া যৌতুকবিহীন।  মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুরে প্রথমবারের মত এক সাথে ১৫ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজনে করেছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন। সেই সাথে নব-দম্পতিকে স্বাবলম্বী করতে নগদ অর্থ, ভ্যান, সেলাই মেশিনসহ সংসারের নানা উপকরণও দিয়েছে এই মানবিক সংস্থাটি।

জানা যায়, নানা মানবিক কাজের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন যৌতুকমুক্ত বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর জেলার ১৫ জোড়া যৌতুকমুক্ত বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেওয়া বর ও কনে উভয়ে অস্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা। এসব অস্বচ্ছল পরিবারের কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার দুঃশ্চিন্তা লাঘবে বিনা খরচে বিয়ের আয়োজনসহ নব-দম্পতিকে স্বাবলম্বী করতে জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন।

নগরীর জুম্মপাড়ার এলাকার কনে নুসরাত বেগম বলেন, এত বড় আয়োজন করে আমার বিয়ে এরকম কষনও ভাবি নাই। এ আয়োজন অনেক ভালো লেগেছে আমার। সংসারের জিনিষপত্র পেয়েছি আরো ভাল লাগতেছে।

পাগলাপীর কিশামত হরকলি গ্রামের বাসিন্দা বর মারজান মিয়া বলেন, যৌতুক ছাড়া বিয়া করবার পারছি। এ্যালা বুক ফুলি চলবার পাইম মুই। কায়ও কিছু কবার পাবার নয় মোর পরিবারক। এমন করি বিয়া হইলে যৌতুক সমাজ থ্যাকি উঠি যাইবে, তাছাড়া যৌতুকের জন্তে আর মেয়ে নির্যাতন হবার ন্যায়।

হরকলি পীরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কনে নার্গিস আক্তারের অভিভাবক নানী খাদিজা বেগম বলেন, মোর জামাই মারা গেইচে অনেক বছর হইল। বেটি একটা তাংকু (তামাক) কোম্পানি চাকরি করি সংসার চালায়। বেটির দুই বেটি ও এক ব্যাটা। বাপ মরা একটা বেটির আইজ বিয়া হইল। ম্যালা খুশি লাগতোছে। বিয়া হওয়ার সাতে সংসারের ম্যালা জিনিষও পাইল। ওমরা সুখে থাকপে এটাই কামনা করো।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যৌতুক সমাজের ব্যাধি। আল-খায়ের ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আমি তার সাধুবাদ জানাই। যেহেতু যৌতুক বেআইনী কাজ, এটি বন্ধ করা পুলিশের কাজ। আমি মনেকরি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ্য ধারার সূচনা হলো।

রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর বলেন, আজকের যৌতুক বিহীন বিয়ের বিয়ষটি ব্যাপকভাবে প্রচার হলে সমাজ থেকে এই যৌতুক ব্যধি দূর হবে। যৌতুক প্রথা বন্ধে এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এমন আয়োজনে প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।

nsss
আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ঘটা করে যৌতুক বিহীন বিয়ের আয়োজন করেছি। তাদের প্রত্যেককে গাড়িতে করে এখানে নিয়ে এসেছি এবং গাড়িতে করেই বাড়িতে পৌঁছে দেব। সাথে প্রত্যেক দম্পতির জন্য এক ট্রাক ভরা উপহার পৌঁছে দেওয়া হবে। তারা যেন কোনভাবেই না ভাবে তারা সুবিধা বঞ্চিত। যদি বিত্তবানরা এভাবে একটি করে পরিবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে শীঘ্রই যৌতুক মুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনের পরিবারসহ বিয়েতে আসা ৩ শতাধিক অতিথির জন্য পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, জর্দা পোলাওসহ নানা খাবার সরবরাহ করা হয়। বিয়ে অনুষ্ঠান শেষে নৈশ্য ভোজের পর গাড়িতে করে বর-কনে ও পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031